চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা নিজের নামে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগে স্বামীর দাফন আটকে দিয়েছে দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুর বেগম। পরে ওই ব্যক্তির মরদেহ ফ্রিজিংভ্যানে রেখে সালিশে বসেছে এলাকাবাসী।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের মরাপাগলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করে মরদেহ দাফনের কথা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত ব্যক্তির নাম মাজেদ বিশ্বাস। প্রায় ২০ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী মারা যান। পরে হামফুল বেগম নামের ওই মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দ্বিতীয় সংসারে কোনো ছেলে মেয়ে হয়নি। প্রায় ৬ মাস আগে মাজেদ বিশ্বাস শয্যাশায়ী হলে পুলিশে চাকরিরত তার দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে তার বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান এবং সেখানে তার বাবার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেন।
এর মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের তালাকনামা উকিল নোটিশের মাধ্যমে হামফুল বেগমের কাছে পাঠানো হয় এবং হামফুল বেগম সেটি গ্রহণ করেননি।
এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ মে গ্রাম্য শালিসের তারিখ নির্ধারণ হয়। কিন্তু গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) মাজেদ বিশ্বাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহ দাফনের জন্য তার দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসলে মাজেদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগম এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার মরদেহ দাফনে বাধা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গ্রাম সালিশে বসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
হামফুল বেগম বলেন, ‘২০ আগে আমাদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় সংসারে এসে আমার সৎ ছেলেগুলোকে মানুষ করি এবং তারা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এখন তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করছে। এই সংসারে এসে আমার স্বামীর সেবা যত্ম ভালোভাবে করেছি। কিছুদিন আগে আমার ছেলেরা প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছে তাও কিছু বলিনি। তারপরে আমার স্বামীকে হঠাৎ করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলে গেলো এবং সেখানে আমার ছেলেরা জোর করে তাদের নামে জমি লিখে নিয়েছে। তারপরে আমার স্বামীর হুঁশ না থাকা অবস্থায় আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমার স্বামী তালাক দিবে না। এটা ছেলেরা করিয়েছে। তাই আমি ন্যায্য বিচার চাই।’
তবে এই বিষয়ে দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যতটুকু শুনেছি যিনি মারা গেছেন তার দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষের ছেলেরা মৃত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার নাম করে নিয়ে গিয়ে জায়গা জমি লিখে নিয়েছে। এই নিয়ে মাজেদ বিশ্বাস মারা গেলে একপক্ষ মরদেহ দাফনে বাধা দেয়। দুপক্ষকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করেছে এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে মঙ্গলবার উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করে তারপর মরদেহ দাফন করা হবে।’