স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণে বাকি আর মাত্র পাঁচদিন। ১৯ জুন মধ্যরাতেই শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। এই সময়টি ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা ঘাম ঝরাচ্ছেন ভোটের মাঠে। জমজমাট করে তুলেছেন প্রচার-প্রচারণা।
শহরের যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই এখন শুধু পোস্টার আর পোস্টার। সবচেয়ে বেশি পোস্টার চোখে পড়ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। দুপুরের পর পদ্মাপাড়ের এই শহর পরিণত হচ্ছে মাইকের নগরীতে। অটোরিকশায় করে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে রেকর্ড করা অডিও বাজানো হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করছেন। এসব মিছিলে নারীদেরই অংশগ্রহণ চোখে পড়ছে বেশি। ১০০ থেকে ২০০ টাকার বিনিময়ে অনেক নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মিছিলে অংশগ্রহণ করছেন। দিচ্ছেন শ্লোগান। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে মিছিল বের করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাই পাড়া-মহল্লায় বইছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ। তবে কোথাও কোথাও এই কাউন্সিলর প্রার্থীরা একে-অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তুলছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটের প্রচার-প্রচারণায় লাখ লাখ টাকা ওড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মিছিলে অংশ নিলেই পাওয়া যাচ্ছে টাকা। যে প্রার্থী যত বেশি টাকা দিচ্ছেন, তার মিছিলই তত বড় হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীরা ভোটারদের মাঝে নিজের ছবি ও প্রতীক সম্বলিত টি-শার্টও উপহার দিচ্ছেন। আচরণবিধি ভাঙার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়ার নজির কম।
রাজশাহী সিটি নির্বাচন থেকে সরে গেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মেয়রপ্রার্থী মুরশিদ আলম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন ভোটের মাঠে তিনজন মেয়রপ্রার্থী। প্রচারণার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের ধারেকাছেও নেই অন্য দুজন। প্রতিদিনই দুই থেকে তিনটি ওয়ার্ডে সমাবেশ করে ভোট চাইছেন লিটন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন শহরের সাহেববাজারসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি ভোটারদের হাতে হাতে লিফলেট তুলে দেন। সাইফুল বলছেন, রাজশাহী শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছিল জাতীয় পার্টি সরকারে থাকা অবস্থায়। লাঙল হচ্ছে উন্নয়নের প্রতীক। তাই তিনি এ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।
এদিকে জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী লতিফ আনোয়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের ভোট প্রার্থনা করছেন। পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ভোটারের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। তিনি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে স্বচ্ছতার সাথে সব কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এই নির্বাচনে নৌকার পালেই হাওয়া লেগেছে। এবার তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হতে যাচ্ছেন বলে নগরবাসী মনে করছেন।
তারপরও প্রচার-প্রচারণায় কমতি রাখছেন না লিটন। বৃহস্পতিবার তিনি মহানগরীর ১২ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। প্রথমে সাহেব বাজার বড় মসজিদে আসরের নামাজ আদায়ের পর সেখানে মুসল্লীদের সাথে গণসংযোগ করেন। এরপর বড়কুঠি ক্যাম্পে গিয়ে পথসভায় বক্তব্য দেন মেয়র প্রার্থী লিটন। পরে নগরীর মন্নুজান স্কুলের সামনে ও আলুপট্টি নদীর ধারা এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পথসভাগুলোতে মানুষের ঢল নামে। পথসভায় বক্তব্যে রাজশাহীর উন্নয়ন চলমান রাখতে ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া তিনি জনসাধারণকে ইভিএম মেশিনে ভোট প্রদানের পদ্ধতি দেখিয়ে দেন।
পথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনার সন্তানদের কর্মের ব্যবস্থা করতে চাই। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করুন। যত বেশি ব্যবধানে আমাকে বিজয়ী করবেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ততবেশি অর্থ বরাদ্দ এনে উন্নয়ন করতে পারবো।
নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ খুব সুন্দর আছে। এখন পর্যন্ত মেয়র প্রার্থীরা একে-অন্যের বিরুদ্ধে গুরুত্বর কোন অভিযোগ আনেননি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা কিছু বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
আগামী ২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ১১২ জন। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য লড়ছেন ৪৬ নারী। নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন।