স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা দায়েরের ১৪ বছর পর পলাতক দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনের বাড়িতে ফেরার খবর পেয়ে চারঘাট থানা পুলিশ এ অভিযান চালায়।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- মফিজ উদ্দিন (৭৫) ও খেতাব (৮০)। এদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে আগেই। সেই মামলাও বিচারাধীন। পলাতক থাকায় এদের এতদিন গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিরা আদালতে গিয়ে জামিনও নেননি। খেতাব পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার বিকাল ৪টায় নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন।
এসপি জানান, ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল কালুহাটি গ্রামের গোলাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি মফিজ উদ্দিন ও খেতাবসহ ছয়জনের নামে মামলা করেন। গোলাম হোসেন অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বাবা শহীদ রওশন আলী সরকারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখন পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে ছিলেন মামলার ছয় আসামি। শহীদ রওশন আলী সরকারকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র অবস্থায় গাড়ির পেছনে বেধে টানা হয়। এতে তার মৃত্যু হয়। ওই মামলা হওয়ার পর আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
এরমধ্যে মামলার ২ নম্বর আসামি সিদ্দিকুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি খবির আলী ও ৫ নম্বর আসামি চয়েন উদ্দিন মারা যান। মামলার ১ নম্বর আসামি মফিজ উদ্দিন ও ৩ নম্বর খেতাব দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর এলাকায় ফেরেন। খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার ৬ নম্বর আসামি শাহিনুর রহমানও পলাতক আছেন। তার সম্পর্কে যাচাই-বাছাই চলছে।
এসপি আরও জানান, রওশন আলী সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। একই দিন আওয়ামী লীগ সমর্থক আরও অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তার মফিজ ও খেতাবের কোন দলে পদ-পদবী নেই। তবে তারা এলাকায় ‘রাজাকার নেতা’ হিসেবেই পরিচিত। দুজনকেই এলাকার লোকজন কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে চেনেন। মফিজকে শনিবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। আর খবির সুস্থ হওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।
এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন আরও জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৭টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু মামলার বিচার শেষ হয়েছে, কিছু মামলা বিচারাধীন। ১৭ মামলায় মোট আসামি ১৩২ জন। এদের মধ্যে ৫৩ জন মারা গেছেন। জীবিতদের মধ্যে দুজন পলাতক। বাকিরা কারাগারে কিংবা জামিনে রয়েছে। পলাতক দুজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।