স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী অঞ্চলে এবার আগেভাগেই কোরবানির পশুর বেচাকেনা জমে উঠেছে। খামারিরা বলছেন, গত দুই বছর কোরবানিতে পড়েছে করোনা ভাইরাসের প্রভাব। তবে এবার করোনা না থাকার কারণে আগেভাগেই জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। আর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, দেশের মধ্যে রাজশাহী বিভাগেই সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। এগুলো বিক্রি হলে খামারিদের হাতে আসবে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, দেশে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি গবাদি পশু। আর কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি পশুর। উদ্বৃত্ত থাকবে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু। ৯ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩টি পশু রয়েছে রাজশাহী বিভাগে। আর সবচেয়ে কম ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি পশু রয়েছে সিলেট বিভাগে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি, বরিশালে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, ঢাকায় ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, ময়মনসিংহে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি, খুলনায় ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি এবং চট্টগ্রামে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে গরু-মহিষ যেমন বেশি তেমনি বেশি রয়েছে ছাগলও। সারাদেশে এবার কোরবানির জন্য ছাগল রয়েছে ৫৩ লাখ ৫ হাজার ৮ হাজার ২৭টি। এরমধ্যে ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৪৫০টিই রয়েছে রাজশাহী বিভাগে। অন্য ছাগলগুলো রয়েছে দেশের বাকি ৮ বিভাগে। রাজশাহী বিভাগে কোরবানির জন্য ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫৬টি ভেড়াও প্রস্তুত রয়েছে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এবার ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬১টি ষাঁড়, ১ লাখ ৯৭ হাজার ২১০টি বলদ, ২ লাখ ২৭ হাজার ১৫২টি গাভী মিলে মোট গরু রয়েছে ১১ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩টি। আর মহিষ রয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ২টি। বিভাগের ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৩ জন খামারীর কাছে আছে মোট ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩টি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। আর বিভাগের আট জেলায় চাহিদা ২৪ লাখ ১২ হাজার ৬২৩টি। উদ্বৃত্ত ২০ লাখ ৬৬ হাজার ১২০টি পশু চলে যাবে দেশের অন্য বিভাগগুলোতে।
এদিকে রাজশাহীতে এবার আগেভাগেই কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। রাজশাহীর সওদাগর এগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল জানান, ‘দুইবছর করোনার প্রভাব পড়েছিল কোরবানিতে। এবার তা নেই। তাই এবার আগেভাগেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আমার খামারে ৩২টি গরু ছিল। কয়েকদিনে সবই বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৭টি গরু ক্রেতা নিয়েও চলে গেছেন। বাকি গরুগুলোর ঈদের আগে নিয়ে যাওয়া হবে।’ তিনি জানান, এখন গোখাদ্যের দাম বেশি। বাজারে মাংসের দামও বেশি। চোখের আন্দাজে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে কোরবানির জন্য গরু বিক্রি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকেই রাজশাহীর গ্রামেগঞ্জের পশুহাটগুলো জমে উঠেছে। রাজশাহীর সিটিহাটও এখন বসছে প্রতিদিন। শহরের উপকণ্ঠে থাকা এই হাটটি উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট। এখানে রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর পশু আসছে। বেপারিরা এখান থেকে পশু কিনে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের নানাপ্রান্তে। এই হাটের ইজারাদারদের একজন ফারুক হোসেন ডাবলু জানান, গত বুধবার থেকে প্রতিদিন হাট বসানো হচ্ছে। বেচাকেনাও জমে উঠেছে। হাটে পশুর দাম স্বাভাবিক।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আবহমানকাল থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর গবাদিপশু উৎপাদন হয়। আবার সরকার সব বিভাগেই গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমানভাবে প্রণোদনা দেয়। তখন রাজশাহী বিভাগের উৎপাদন অন্য বিভাগের চেয়ে আরও বেশি বেড়ে যায়। এবারও রাজশাহী বিভাগের উদ্বৃত্ত গবাদি পশু দেশের অন্য স্থানে চলে যাবে। এবার রাজশাহী বিভাগে যে পশু রয়েছে তার সব বিক্রি হলে খামারিদের হাতে ৩৬ হাজার ৬২৩ কোটি নগদ টাকা আসবে।’