নাটোর প্রতিনিধি: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার মোকাম হিসেবে খ্যাত নাটোর স্টেশন বাজার সংলগ্ন চকবৈদ্যনাথের মোকামগুলো। ঈদের চতুর্থ দিন রোববারও চামড়া লবণজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ব্যবসায়ীরা। এবার চামড়ার দাম কমলেও লবনের দাম দ্বিগুণ ও চ্যানারীতে পুঁজি বাকি পড়ায় বিপাকে পড়েছেন মোকাম ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় নগদ টাকায় চামড়া কিনতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে রাজশাহীসহ আশে পাশের জেলা থেকে নাটোর মোকামে আসতে শুরু করেছে লবণযুক্ত কিছু চামড়া। এখানে প্রায় দের শতাধিক আড়ত রয়েছে । এসব আড়ৎ মালিকরা সাড়ে ৫০০ থেকে ১১ শো টাকা পর্যন্ত কোরবানি পশুর চামড়া ক্রয় করছেন। এছাড়া ছাগল-বকরির চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। আর লবণ যুক্ত চামড়া বিক্রয় হচ্ছে ১ শো টাকায়। তবে চামড়া ক্রেতাদের দাম নিয়ে অভিযোগ না থাকরেও বিক্রেতারা বলেছেন, অল্প দামে কেনা- বেচা হয়েছে কোরবারির পশুর চামড়া। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ।
রাজশাহী বাঘা এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী মহিদুল হোসেন বলেন, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই বেশি দামে কিনেও চামড়া বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব না। সরকারের বেধে দেওয়া দামের উপরে টার্গেট করে পশুর চামড়া কিনতে হচ্ছে। তিনি সর্বচ্চো গরুর চামড়া কিনেছেন ১ হাজার টাকায়। আর সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায়। এছাড়া ছাগলের চামড়া কিনেছেন ৩০ টাকায়। আর বকরি চামড়া কিনেছেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ ও আড়ৎদাররা জানান, গত দুই মৌসুমে নগদে বেচাকেনা হলেও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনও বকেয়া প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। তারপরও ধারদেনা করে চামড়া কিনতে প্রস্তুত পুঁজি হারানো অনেকেই। তবে শেষ সময়ে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা। নগদ টাকায় চামড়া বেচাকেনা হওয়ায় পুঁজি সংকটে রয়েছেন নাটোর মোকামের অনেক ব্যবসায়ী। তার পরেও কোরবানী ঈদের সময়েই দেশের মোট ৫০ ভাগ চামড়া ঢাকার ট্যানারীগুলোতে পাঠানো হয়।
নাটোর শহরের চালপট্রি এলাকার মৌসুমি চামড়া শাহ আলম বলেন, ৫ থেকে ৭ বছর আগেও ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে তাঁরা ২ হাজার থেকে আড়াই ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতেন। চামড়ার সেই সুদিন এখন আর নেই। এখন চামড়া কিনতে হয় ভয়ে ভয়ে, যদি বিক্রি না করতে পারি। তার পরে তিনি এবছ ১৩টি গরুর চামড়া কিনে ২শ টাকা কমে বিক্রয় করছেন।
স্থানীয় আড়ৎদার খাইরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকের মজুরি ও লবণের দাম বেশী হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তাদের চামড়ার দাম অনেক বেশি পড়েছে। চামড়া থেকে লবণের দাম বেশি। ছোট চামড়ায় ৫ কেজি ও বড় চামড়ায় ১০ কেজি লবণ লাগে। লবণের এতো দাম হয়েছে যে চামড়া বাঁচানো দায় হয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী মুঞ্জুর-উল আলম হিরু বলেন, লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবছর ক্ষতির আশঙ্কা করছি। গতবছর দর ছিল ৭০০-৭৫০, এবার চলছে ১২০০-১২৫০ টাকা।
চামড়া ব্যবসায়ী বাবলু প্রামানিক জানান, গত ২০১৪ সাল থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিয়ে গেছে, কেউ টাকা দেয় নি। এই নিয়ে শিল্প মন্ত্রনালয়ের সাথে গতবার তারা বৈঠক করেছেন, ট্যানারী মালিকরা যাতে দ্রুত সময় নাটোরের আড়ৎ মালিক ও ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করে দেয়। কিন্তুু সেই টাকা এখনো পরিশোধ করেন নাই।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই দিনে নাটোর মোকামে গরু ও খাসি মিলে লক্ষাধিক পিস চামড়া এসেছে। আগামী সপ্তাহে বাহিরের বিভিন্ন জেলা থেকে লবণ যুক্ত চামড়া এসে পৌঁছবে। সে সময় ঢাকার ট্যানারি মালিক বা তাদের প্রতিনিধিরা গতবারের মত এবারও নগদ টাকায় নাটোর মোকাম থেকে চামড়া কিনতে আসবেন বলে আশা করছেন তিনি।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ এর চেয়ারম্যান মকসেদ আলী, এবার আশা করছি, ৫ থেকে ৬ লাখ গরুর চামড়া এবং ৮-১০ লাখ ছাগলের চামড়া আমদানি হবে। চামড়া পাচাররোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ কঠোর নজরদারি করবে প্রশাসন।
নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুইয়া বলেন, “চামড়া পাচারের বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে সকল ধরনের পুলিশী টহল থাকবে।