স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি দেশব্যাপী যে বিভাগীয় সমাবেশে করছে, তার মধ্যে রাজশাহীর সমাবেশই সবচেয়ে বড় হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতারা এ কথা বলেছেন। মহানগরীর মালোপাড়ায় নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ বানচাল করতে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়েছেন। বিভাগজুড়ে এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা করা হয়েছে। তারপরও রাজশাহীতে দেশের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে। অন্তত ১৫ লাখ নেতাকর্মী যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, ‘গতরাতেও গোটা বিভাগে বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এসব করে কোন লাভ নেই। আমরা সব পুলিশকে দোষারোপ করি না। গুটি কয়েক পুলিশের কারণে গোটা পুলিশ সমাজের বদনাম হচ্ছে। এই সমাবেশ নিয়ে যতই বাধা আসবে, ততই প্রতিরোধ হবে। পদ্মা নদী যেমন তীব্র স্রোত নিয়ে সাগরে মিশেছে, তেমনি পদ্মার স্রোতের মানুষ সেদিন ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে মিলিত হবে।’
আগামী শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের তিন দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন। তবে এখনই তারা ঢুকতে পারছেন না সমাবেশস্থলে। সেখানে নেতাকর্মীদের থাকার মতো কোন প্যান্ডেলও করা সম্ভব হয়নি। তাই বিভিন্ন হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে তারা থাকতে শুরু করেছেন।
সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট হবে ধরে নিয়ে আগেভাগেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুরে নগর বিএনপির কার্যালয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে আসা ২৫ জনের একটি দলকে দেখা যায়। শিবগঞ্জের বিহারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম তাদের এনেছেন। সাইফুল জানান, ‘শোয়ার জন্য চাদর, খাওয়ার জন্য চিড়া, মুড়ি ও গুড় নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দিতে তিন দিন আগেই চলে এসেছেন।’
দলে ছিলেন শিবগঞ্জের সংসারদীঘি গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি আবদুল গফুর। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমরা আর এই সরকারকে চায় না। সরকার সমাবেশে আসতে বাধা দিবে। তাই আগেভাগেই এসেছি। কষ্ট করে হলেও এই তিনটা দিন আমরা রাজশাহীতে কাটাব। সমাবেশ সফল করব।
সংসারদীঘি গ্রামের মোজাহার আলী বলেন, ‘শুকনা খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। শোয়ার জন্য একটা চাদরও এনেছি। যেখানে রাইত, সেখানেই কাইত। আপাতত এটাই সিদ্ধান্ত।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘সমাবেশের আগে ধর্মঘট হবে। নেতাকর্মীরা আগে আগেই আসতে শুরু করেছে। তাদের থাকার জন্য আমরা শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলো ঠিক করেছিলাম। পুলিশ সবখানে গিয়ে বলে আসছে, কেউ যদি বিএনপির লোকজনকে থাকতে দেয়, তাহলে তাকেই ধরে নিয়ে যাবে। এটা কেমন কথা ভাই? একটা সভ্য দেশে এটা হতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘সমাবেশের আগে মাদ্রাসা ময়দানের পাশে একটা দেড় বিঘা জায়গায় নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। পুলিশ গিয়ে সেটি ভেঙে দিয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, মাঠের আশপাশে বালুচর কিংবা সরকারী খাস জমিতে আমরা থাকতে পারব। এখন সেটাও হতে দিচ্ছে না। তারপরও নেতাকর্মীরা আসবেন, প্রয়োজনে রাস্তায় থাকবেন।’
রাজশাহীতেই দেশের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা দূর থেকে আসা মানুষকে থাকতে দেবেন। প্রয়োজনে নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়াবেন। এভাবেই এখন আমাদের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। যে কোন মূল্যে সমাবেশ সফল হবে এবং এই সমাবেশ থেকে ঢাকার সমাবেশের একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।’
আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপির এই সমাবেশ হবে। বুধবার ৮টি শর্তে নগর পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ আয়োজন এবং মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে সমাবেশের মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ করা লোকজন ছাড়া অন্য কেউ ৩ ডিসেম্বরের আগে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।