স্টাফ রিপোর্টার: সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকার কিস্তি মাইনুজ্জামান সেন্টুর। ওষুধ আর অক্সিজেন নিয়ে তাঁর নিজের জন্য খরচ প্রতিদিন আরও ৬০০ টাকা। তাই কাজ না করে বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ নেই। গত শুক্রবার রিকশার সামনে অক্সিজেনের সিলিন্ডার তুলে নলটা লাগিয়ে নিয়েছিলেন মুখে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তারপর শুরু করেন রিকশা চালানো। এভাবে দুই দিন রিকশা চালান। কিন্তু পরে আর পারেননি। অসুস্থতার কারণে ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে।
এরমধ্যেই মুখে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানোর ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এরপর রাজশাহীর এই রিকশাচালকের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে সেন্টুকে দেখে এসেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। তিনি রিকশাচালক সেন্টুর চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। এছাড়া অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন।
রিকশাচালক সেন্টুর বাড়ি রাজশাহী নগরীর কলাবাগান এলাকায়। সেন্টুর দুই মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন স্ত্রীকে নিয়ে সংসার সেন্টুর। কলাবাগান এলাকায় দুই হাজার টাকার ভাড়াবাসায় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। সমস্যা রয়েছে হৃদযন্ত্রেরও। গত রোববার তাকে রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সেখানেই।
সেন্টুর স্ত্রী চম্পা বেগম জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছিলেন সেন্টু। দুই বছর পর রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। এরপর আবার ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আরেকটি রিকশা কেনেন সেন্টু। এরই মধ্যে শরীরে বাসা বাঁধে হার্নিয়া। এর অপারেশনের জন্য আবার ঋণ করতে হয় ৫০ হাজার টাকা। এখন সবমিলিয়ে সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয় তাকে। ফুসফুসের সমস্যার কারণে সবশেষ দেড় মাসের মধ্যে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এখন অক্সিজেন ছাড়া চলতেই পারছেন না। গত পাঁচ মাস ধরে দিনে তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। ওষুধও কিনতে হয়। ওষুধ-অক্সিজেনেই খরচ রোজ ৬০০ টাকা। কিস্তি এবং নিজের চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার রিকশায় তুলে মুখে নল লাগিয়েই রিকশা চালাতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু দুইদিন পর শরীর বেশি খারাপ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বাড়িতে গিয়েও সব সময় অক্সিজেন লাগবে বলে চিকিৎসক একটা ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’ মেশিন কিনে নিতে বলেন।
এই মেশিনটির দাম অন্তত ৫০ হাজার টাকা। সেন্টুর অক্সিজেন নল লাগিয়ে রিকশা চালানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে মেশিনটি কেনার জন্য ইতোমধ্যে একজন ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজশাহীর ডিসি শামীম আহমেদ তাকে দেখতে যান। তিনিও এই মেশিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিনে দেওয়ার আশ^াস দিয়েছেন।
তবে এখনও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত রিকশাচালক সেন্টু। তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারি না। একটু কথা বললে হাপিয়ে উঠি। ডাক্তার বলেছে যে, ফুসফুসেও বড় সমস্যা। ভারি কাজ করা যাবে না। একটা সহজ কাজ দরকার, যেটা বসে থেকেও করতে পারব। তাহলে আমার সংসারটা চলবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমি জানি না।’
রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাসান তারিক বলেন, সেন্টুর সিওপিডি ও যক্ষ্মা আছে। তাই তাঁর ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়েছে। হার্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। হার্টে যে পরিমাণ অক্সিজেন যাওয়া দরকার তা যাচ্ছে না। তাই সেন্টু স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন নিতে পারছেন না। ‘কনসেনট্রেটর’ মেশিনটি কিনে নিলে তিনি স্বাভাবিকভাবে বাতাস গ্রহণ করতে পারবেন। তখন আর তাঁর অক্সিজেনের খরচ লাগবে না।
রাজশাহীর ডিসি শামিম আহমেদ বলেন, ‘সেন্টুর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় জেলা প্রশাসন বহন করবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিনটি সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। তাই এই মেশিনটা তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার পর সেন্টুকে অফিসে ডাকা হয়েছে। তার সমস্যা শুনে সমাধান করা হবে।’