স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই ফাঁসির আসামির সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন স্বজনেরা। সাক্ষাতের জন্য গত রোববার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ তাদের চিঠি দেয়। এরপর মঙ্গলবার স্বজনেরা কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেন।
বেলা ১১টার দিকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাবির একই বিভাগের বরখাস্ত হওয়া সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্বজনেরা সাক্ষাৎ করেন। অনেকটা গোপনে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে তারা কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে দুপুরে তারা আবার মাইক্রোবাসে চড়েই চলে যান।
পরে দুপুর ১২টার দিকে আরেক আসামি ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনেরা সাক্ষাৎ করতে আসেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে একে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। হুইল চেয়ারে বসে এসেছিলেন জাহাঙ্গীরের প্যারালাইজড বাবা আজিম উদ্দিনও। ছিলেন বড় ভাই সোহরাব আলী, ছোট ভাই মিজানুর রহমানসহ প্রায় ৪০ জন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের পেছনের ফটক দিয়ে বের করে দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পরিবারের সকল সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন তাঁর ছোট ভাই রাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক নির্ঝর রহমান। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মানসিক অবস্থার কারণে তিনি কথা বলতে চাননি।
স্বজনদের এভাবে ডেকে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, যে কোন সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। কয়েকদফা ফোন করা হলেও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আবদুল জলিল ও জেলার নিজাম উদ্দিন ধরেননি। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘রায় কার্যকরের বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না।’
বিশ^বিদ্যালয়ের কোয়ার্টার থেকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর লাশ বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। এই হত্যা মামলার তদন্তে উঠে আসে, পদোন্নতি না পাওয়ার ক্ষোভে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া দুজনকে খালাস দেন আদালত।
পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন। অন্যদিকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির স্বজনেরাও দণ্ড কমাতে একের পর এক আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
তবে সবখানেই দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। সবশেষ জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে একটি রিট করেছিলেন। শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিট খারিজ করে দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়। সেই আবেদন মঙ্গলবার সকালে খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি।