স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর চৌরঙ্গী মসজিদ
নির্মাণ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করেছেন
কয়েকজন মুসুল্লি। মুসল্লিদের অভিযোগ, মসজিদ কমিটির
নেতৃবৃন্দ কোন নকশা অনুমোদন ছাড়াই সাততলা মসজিদ ভবন
নির্মাণের কাজ করছেন। এর প্রতিবাদ করার কারণে মুসল্লিদের
ওপর হামলা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, নকশা অনুমোদন না করেই মসজিদের নিচতলায়
অবৈধভাবে ২৬টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। কমিটি
নেতৃবৃন্দ দোকান বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে
ভরেছেন। সম্প্রতি কয়েকজন মুসল্লি মসজিদ কমিটির এসব
বেআইনী কাজের প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে মারধর করা হয়েছে।
প্রতিবাদ করলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে
মুসল্লিদের পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে নগরীর রাজপাড়া থানায়।
জানা গেছে, মুসল্লি আমিনুর রহমান বাচ্চু গত ২০ জুলাই
মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারীসহ আটজনের নামে
রাজশাহী মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা
করেছেন। মামলা নম্বর-২৫৬/২০২৩। এছাড়া মসজিদের নির্মাণ
কাজ যাতে আইনসম্মতভাবে করা হয় তার জন্য রাজশাহীর সিভিল
আদালতে পৃথক একটি মামলা করা হয়েছে।
বাদী আমিনুর রহমান বাচ্চু মামলার অভিযোগে বলেন, তিনি
একজন মুসল্লি হিসেবে লক্ষীপুর চৌরঙ্গী মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ পড়েন। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা মসজিদ
কমিটির বিভিন্ন পদের নেতা। সাততলা বিশিষ্ট চৌরঙ্গি
মসজিদটির নির্মাণ কাজ বেআইনীভাবে চলছে। আসামিরা
কোন প্রকার নকশা বা বিধিবদ্ধ প্ল্যান ছাড়াই মসজিদের
নিচতলায় ২৬টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। মসজিদটিতে
আগে নিচতলায় নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন মুসল্লিরা। গত
১৭ জুলাই মাগরিব নামাজের পর মুসল্লিরা কোন প্রকার নকশা
অনুমোদন ছাড়াই মসজিদের নিচতলায় ২৬টি দোকানঘর
নির্মাণ ও বিক্রির প্রতিবাদ করেন। এ সময় আসামিরা
কয়েকজন মসুল্লির ওপর হামলা চালান। এতে বাচ্চুসহ তিন
মুসল্লি আহত হন। তবে মুসল্লিদের ওপর হামলার অভিযোগ
অস্বীকার করেছেন সভাপতি ইকবাল বারী।
অভিযোগকারী মুসল্লিরা জানান, চৌরঙ্গি মসজিদটি
রাজশাহীর একটি পুরাতন মসজিদ। মসজিদের পশ্চিম প্রান্তে
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবন নির্মাণের সময় মসজিদের
দেয়ালে ফাটল ধরে। মসজিদ কমিটি মামলা করলে পপুলার ৩ কোটি
৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। আগের পাঁচতলা
মসজিদটি ভেঙ্গে বর্তমানে সাততলা করা হচ্ছে। রাজশাহী
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে এনওসি নেওয়া হলেও কোন প্রকার নকশা
অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এনওসিতে আরডিএ বলেছে, নিচতলায়
কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু
মসজিদ কমিটি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নিচতলায় ২৬টি দোকান
নির্মাণ করে। এসব দোকানের একেকটি ৭০ থেকে ৮০ লাখ
টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি মসজিদ কমিটির সভাপতি
ইকবাল বারীসহ কমিটির সদস্যরা একটি করে দোকান
নিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা মুসল্লিদের মতামতকে উপেক্ষা করে
এসব অবৈধ নির্মাণ করেন ও দোকান ভাগাভাগি করেছেন।
মুসল্লিরা আপত্তি করাতেই এই হামলার ঘটনা ঘটে।
মসজিদের কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের নিচতলার দুই
পাশে সারিবদ্ধভাবে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশ পথে
দুইদিকের দোকানের মাঝখান দিয়ে সংকীর্ণ একটি পথ রাখা
হয়েছে। মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশের মুল পথ এটি। অনেক
প্রবীণ মুসল্লি এতদিন নিচতলায় নামাজ আদায় করতেন।
নিচতলায় মার্কেট হওয়ায় তাদেরকে দুই বা তিনতলায় উঠতে
হবে। বৃদ্ধ মুসল্লিদের জন্য এটা কষ্টের ও বিড়ম্বনার। নিচতলার দুই
পাশে দোকানপাট হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে সেখানে মানুষের
ভিড় থাকবে। এই ভিড় ঠেলে মুসল্লিদের মসজিদের উপরে উঠতে
হবে। এতে মুসল্লিদের ভোগান্তি যেমন বাড়বে তেমনি
মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হবে।
মামলা দাখিলকারী আইনজীবী মজিজুল হক জানান, আদালত
মসজিদ কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। সেই
সঙ্গে মসজিদ স্থাপনার নকশাও আদালতে পেশ করতে আদেশ
দিয়েছেন আদালতের বিচারক। এই বিষয়ে জানতে চৌরঙ্গি
মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারী বলেন, নকশা
অনুমোদন নিয়ে মসজিদের কাজ হচ্ছে। তবে রাজশাহী উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন,
চৌরঙ্গি মসজিদ প্ল্যানের জন্য একটি আবেদন এসেছে, কিন্তু
এখনো অনুমোদন হয়নি। মসজিদ কমিটি যে নির্মাণ কাজ
করছে তা সংশোধন করতে আরডিএর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া
হয়েছে।