অনলাইন ডেস্ক : নওগাঁয় কারাবন্দি বাসচালকের মুক্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরাও। চলমান এই আন্দোলনের বিষয়ে রোববারের আগে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় শহরের মশরপুর বাইপাস এলাকায় আব্দুল জলিল শিশুপার্কের সামনে হানিফ পরিবহনের একটি বাস কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। এতে পার্কে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীসহ ২১ জন গুরুতর আহত হন। পরে একজনের মৃত্যুও হয়। এ ঘটনার পরদিন বাসচালক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আহতদের এক স্বজন। পরে ওই মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ১৬ জুলাই আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন চালক ইমরান হোসেন। ওই সময় বিচারক তার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও জামিন পাননি ইমরান। এতে ক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়ে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।
শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধমর্ঘটের দ্বিতীয় দিনেও বাস চলাচল শুরু না হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে জেলার ১১টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, জয়পুরহাট ও বগুড়া রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। বাড়তি ভাড়া দিয়ে কাঙিক্ষত গন্তব্যে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হচ্ছে তাদের। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে টানা দুই দিন বাস বন্ধ থাকায় বাসস্ট্যান্ডে শুয়ে বসে অলস সময় পার করছে পরিবহন শ্রমিকরা। বাস বন্ধ থাকায় তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য অনেক পরিবহন শ্রমিককে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হচ্ছে।
রাজশাহী যাওয়ার জন্য বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ধর্মঘটের জন্য ভেবেছিলাম বিআরটিসি বাসে যাব। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে আসতে দেরি হওয়ায় বিআরটিসি বাস ছেড়ে চলে গেছে। বিকেলের মধ্যে রাজশাহী পৌঁছানোটা জরুরি ছিল। এখন আর সেটা সম্ভব হবে না। সিএনজিতে যেতে সন্ধ্যা লেগে যাবে।
বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় কৃষক লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে মান্দা থেকে নওগাঁ শহরে সিএনজিতে এসেছি ৭০ টাকায়। এখন মান্দায় ফিরতে আবারো গুনতে হবে ৭০ টাকা। বাস বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ৪০ টাকা খরচ গুনতে হচ্ছে। এটা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে কষ্টের। বাস বন্ধ থাকার সুযোগে সিএনজি চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
নওগাঁ-আগ্রাদ্বিগুন রুটে চলাচলকারী বাস চালকের সহযোগী ফরিদুল ইসলাম বলেন, বাসে যারা কাজ করি তারা প্রায় বেশিরভাগই অশিক্ষিত। তাই চাইলেও বাস বন্ধ থাকলে অন্য কোনো কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যায় না। পরিবহনে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকই দিনমজুরের মতো। দিন আনি দিন খাই। বাস বন্ধ থাকলে কোনো আয় হয় না। তখন না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক পরিবহন শ্রমিক বলেন, বাস বন্ধ রাখার পক্ষে আমরা নয়। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। দুই দিন যাবত এক বেলা খেয়ে দিন পার করছি। অনেকের পকেটে এক বেলা খাওয়ার মতো টাকাও নেই। নেতারা তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বেলায় আছে। অনাহারে থাকা শ্রমিকদের একবেলা খাওয়ানোর মতো সদিচ্ছা তাদের নেই। অথচ সংগঠনের তহবিলে টাকার অভাব নেই।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাহারুল ইসলাম বলেন, কারাবন্দি ওই চালকের জামিনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী রোববার তার জামিনের জন্য পুনরায় আবেদন করা হবে। এজলাসে গিয়ে শ্রমিক নেতারা বিচারককে অনুরোধ জানাবে। ওইদিন বিচার বিভাগ নমনীয় হলেই অভ্যন্তরীণ রুটে আবারো বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, কারাবন্দি কাউকে জামিন দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়। এখানে পুলিশের কিছু করার নেই। এরপরও যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রতিনিয়ত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি তারা বিষয়টি বুঝবেন এবং শিগগিরই বাস চলাচল স্বাভাবিক করবেন।