অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে বাড়িতে ঢুকে এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করেছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। শুক্রবার ভোরের দিকে বিহারের আরারিয়া জেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নীতিশ কুমার প্রশ্ন করেন, এভাবে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা যায়?
পুলিশ বলছে, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাংবাদিকের নাম বিমল কুমার যাদব। ৩৫ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ভারতের সংবাদপত্র ‘দৈনিক জাগরণে’ কাজ করতেন।
বিহার পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দুকধারীরা বিমল কুমার যাদবের বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেয় এবং তার নাম ধরে ডাকে। পরে দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে তার বুকে গুলি করে পালিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় থানার পুলিশ প্রধান ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আরারিয়া জেলার পুলিশ সুপারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে প্রতিবেশীদের সাথে পুরোনো শত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে একই কায়দায় খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক বিমল কুমার যাদবের ছোট ভাই কুমার শশিভূষণ ওরফে গাব্বু। বিমল কুমার যাদব এই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে আজকের এই ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে সন্দেহ করা হচ্ছে।
যাদবের ছোট ভাইকে হত্যার মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যাদব তার ভাইয়ের হত্যাকারীর বিরুদ্ধে আদালতে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দেননি। তবে আগামী শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল তার। অন্যদিকে মামলার আসামিরা তাকে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য একাধিকবার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিহার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিতেন্দ্র সিং গঙ্গওয়ার বলেছেন, অভিযুক্তরা চার্জশিট পড়ার পর যাদবের সাক্ষ্য তাদের মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে থাকতে পারে। পুলিশ এই বিষয়টি মাথায় রেখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করবে। কারণ যাদবের পরিবারও দুটি খুনের ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
আরারিয়ার পুলিশ সুপার অশোক কুমার সিং বলেন, ‘রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় বিমল কুমার যাদব নামে এক সাংবাদিককে অজ্ঞাত অপরাধীরা গুলি করে হত্যা করেছে… ময়নাতদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলে ‘ডগ স্কোয়াড’ পাঠানো হয়েছে।
বিমল কুমার যাদব ১৫ বছর বয়সী এক ছেলে ও ১৩ বছরের এক মেয়ে রেখে গেছেন। বিরোধীরা সাংবাদিককে হত্যার এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, বিহারে গণতন্ত্র যে বিপদে পড়েছে সেটিই তুলে ধরছে এই হত্যাকাণ্ড।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সম্রাট চৌধুরী বলেন, বিহারে অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সাংবাদিকসহ নিরপরাধ নাগরিক, এমনকি পুলিশ কর্মীরাও খুন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, আরারিয়ায় যা ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও আরজেডির প্রধান লালু প্রসাদের নেতৃত্বে ‘ঘামন্দিয়া’ (অহংকারী) মহাগাঠবন্ধন রাজ্যে সরকার গঠন করার পর থেকে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।