রবিবার, মে ৫, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

নাটোরে পুলিশের সাথে আসামী ধরতে শীর্ষ সন্ত্রাসী : দুই পুলিশ কর্মকর্তা বদলি

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া সেলিমকে সাথে নিয়ে পুলিশ ময়েন উদ্দীন নামে অপর আসামীকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় ধরার এমন একটি ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠে জেলা জুড়ে। অতঃপর নাটোর সদর থানা থেকে সম্প্রতি অন্য দুই থানায় বদলি করা হয় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে । তবে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা বদলির বিষয়টিকে বলছেন এটি নিয়মিত রুটিন বদলি যা জনস্বার্থে করা হয়।

অপরদিকে হঠাৎ মঙ্গলবার (অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নাটোর থানার সামনে একদল শ্রমজীবী মানুষ ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে মানববন্ধনে অংশ নেয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের এমন সখ্যতার ঘটনাকে মারাত্মক হুমকি হিসাবে দেখছেন সচেতন নাগরিক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নাটোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া সেলিম এবং এসআই মিন্টু মারামারি মামলার আসামী ময়েন উদ্দীনকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় ধরে নিয়ে আসছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের কয়েকজন সহযোগী।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধার পরে শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস চত্বরে সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হন, একাধিক মামলার আসামী জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল শেখ বাপ্পি। সে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।

গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকলীগ নেতা বাপ্পিকে মারধরের মামলার আসামী ধরতে অভিযানে বের হয় এসআই এ.জে. মিন্টু এবং এসআই মো. আরিফুল ইসলাম। এরপর জেলা বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে ময়েনকে গ্রেফতার করার পরে গোলাম কিবরিয়া সেলিমকে সাথে নিয়ে আসামী ময়েনকে ধরে নিয়ে আসছে এসআই মিন্টু এমন ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন্ মাধ্যমে।

এরপর বিষয়টি নজরে আসলে তড়িঘরি করে উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলামকে নলডাঙ্গা থানা এবং এ,জে মিন্টুকে গত শুক্রবার বাগাতিপাড়া থানায় বদলি করেন পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। পরের দিন শনিবার তারা স্ব-স্ব থানায় যোগদান করেন।
এরপর মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নাটোর থানার সামনে একদল নারী-পুরুষ এসআই মিন্টু এবং এসআই আরিফকে মানবিক পুলিশ অফিসার দাবি করে তাদের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি করে মানববন্ধন করেন।

তাদের মতে, নাটোর থানার পৌর এলাকার ৭,৮,৯ এর এসআই আরিফুর রহমান এবং ৪,৫,৬ এর এজে মিন্টু দীর্ঘ দিন থেকে বিট অফিসার হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। তখন এলাকায় চুরি, ছিন্তাইয়ের ব্যাপারে এ দুই অফিসার সচেতন থাকতেন এবং কাজ করে টাকা পয়সা নিয়ে শ্রমজীবীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারতো। একই দাবী করেন রুবিনা খাতুন ও শামীমা। এই দুই অফিসারকে তারা ফিরে পেতে চান।

এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক নাটোর জেলা শাখার সভাপতি এড. আব্বাস আলী বলেন, ‘আাসামী ধরার এখতিয়ার শুধু পুলিশের। কোনো সন্ত্রাসী আসামী ধরতে গেলে তা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এটা সুশাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। সন্ত্রাসী যদি আসামী ধরে আনে তাহলে পুলিশের কাজ কী?’
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা আলী বাবলু বলেন, নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের ঘনিষ্ঠতা সকলেই জানে। পুলিশের সাথে সেলিম বিভিন্ন জায়গায় আসামী ধরার অভিযান চালাতে যায়। সন্ত্রাসীরা যদি আসামী ধরতে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া সেলিম বলেন, ‘সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমি পুলিশকে আসামী ধরতে সহযোগিতা করেছি। পুলিশের সাথে বাপ্পীকে মারধরের আসামী ময়েনকে বাগাতিপাড়া থেকে ধরে নিয়ে এসেছি। আমি সাধারণ জনগণ, পুলিশ জনতা ভাইভাই। আমি আসামীর খবর পেয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছি।’

নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহমেদ বলেন, ‘মারামারি মামলার আসামী ময়েন উদ্দীনকে বাগাতিপাড়া থেকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে এসআই এজে. মিন্টু এবং আরিফুল ইসলাম। এরপর আমাকে হোয়াটস অ্যাপে আসামী ধরার ছবি পাঠায়। কিন্তু আসামী ধরার ক্ষেত্রে পুলিশকে কার সহযোগিতা নিয়েছে সেটা আমার জানা নাই। তারা যে অপরাধ করেছে সেটার শাস্তি তারা পেয়েছে। ‘তবে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের সাথে তার (ওসি নাছিমের) ঘনিষ্ঠতা বিষয় তিনি অস্বীকার করে বলেন, এরকম অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

পুলিশের দুই উপপরিদর্শক আসামী ধরতে সন্ত্রাসীদের সাথে নেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নাটোরের পুলিশ তারিকুল ইসলাম। তবে তাদের বদলীর বিষয়টিকে নিয়মিত পুলিশের কার্যক্রমের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। আর ওই দুই উপপরিদর্শকের বদলি ঠেকাতে কারা কেন মানববন্ধন করলো সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

তবে বারবার চেষ্টা করতে অভিযুক্ত উপপরিদর্শক এ.জে. মিন্টু এবং উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ফোন ধরেন নি।
এব্যাপাারে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম (পিপিএম) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী দুইজন অফিসার বদলি করা হয়েছে।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে একই স্টেশনে কাজ করেছেন। তারা দুজনই অদক্ষ, এজন্য কিছু উপকার ভোগী লোকজন মানববন্ধন করেছে। বদলির বিষয়টি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লোকজন জমায়েত ব্যানার মাইক এসব বিষয় কারো কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

সর্বাধিক পঠিত