অনলাইন ডেস্ক : বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে তামিম ইকবালের পাশে দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। টস চলাকালে বিজয়কে দেখে খানিকটা খটকাই লেগেছিল বটে। কারণ তখন পর্যন্ত দুর্বার রাজশাহীর যে জার্সির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছিল, বিজয়ের পরনে ছিল না সেটি। পরে জানা যায়, প্রাকটিস জার্সি নিয়েই টস করতে নেমে পড়েছেন রাজশাহী অধিনায়ক।
চলতি বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীকে নিয়ে বিতর্কের শুরুটা বলতে গেলে সেখান থেকেই। এরপর থেকে যত সময় গড়িয়েছে পদ্মাপাড়ের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নিয়ে তত বেশি বিতর্কের দাবানল ছড়িয়েছে কেবল। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধে ব্যর্থতা, প্রাকটিস বর্জন, বিদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচ বয়কট, খেলোয়াড়দের দেওয়া চেক বাউন্স থেকে শুরু করে সবই দেখা গেছে এই সময়ের মাঝে। আর সবশেষে দেখা গেল বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তার চিত্র।
মাঠের খেলায় সব রেকর্ড, রান, উইকেট আর সংখ্যার খেল ছাপিয়ে এই বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত নামটাও তাই শফিকুর রহমান। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা এমডি পদের চেয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি দুর্বার রাজশাহীর মালিক।
ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ নিয়ে খুঁজতে গিয়ে অনলাইনে তথ্য পাওয়া বেশ মুশকিল। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে জানার একমাত্র উপায় তাদের ওয়েবসাইট। সেখান থেকেই জানা গেল, উত্তরার হাজী ক্যাম্প, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলন অডিটোরিয়াম, বিজয় স্মরণীর ফোয়ারাসহ বেশকিছু স্থাপনার রেকর্ড তাদের রয়েছে।
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ রিহাবের (রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর অন্যতম নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান। যদিও রিহাবের ওয়েবসাইটে সদস্যদের তালিকায় পাওয়া যায়নি ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ বা এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি এই নামের ফেসবুক পেইজেও কোনো তথ্য যোগ হয়নি গত ১০ বছরে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শফিকুর রহমান।
যেভাবে বিপিএলে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ
দেশের বেসরকারী টেলিভিশন যমুনা টিভির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, কিভাবে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ তথা শফিকুর রহমান বিপিএল মালিকানায় এসেছেন। বিতর্ক আছে ফ্রাঞ্চাইজিটির মূল মালিকানা নিয়েও। রাজশাহীর মালিকানা অন্তত তিনজনের কাছে ছিল বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শুরুতে কবির নেওয়াজ নামের বিসিবির এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার ব্যবসায়ী বন্ধু রাজশাহী ফ্রাঞ্চাইজিটি কেনেন। টিম এন্ট্রি ফির দেড় কোটি টাকার অর্ধেকও তিনিই পরিশোধ করেন। এরপর সেই মালিকানায় এন্ট্রি নেন তারই ভাগ্নে রাজশাহীর ক্রীড়া সংগঠক ইমতিয়াজ জামিল দীপন এবং সিসিডিএম কো-অর্ডিনেটর আমিন খান! আমিন চল্লিশ লাখ টাকা দিয়ে মালিকানার অংশ হন।
কিন্তু মালিকানা নিতে কনসোর্টিয়াম প্রয়োজন বলে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপকে আনেন আমিন খান। এই একই গ্রুপের অধীনেই ছিল বিপিএলের বহু আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা ডমিনেটর্স। মালিকানার অংশ হয়েই জেঁকে বসে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ এবং শফিক রহমান। বিসিবির কাছে তারা পূর্ণ মালিকানা দাবিও করে এবং ড্রাফটের আগের রাতে রাজশাহীর একক মালিক হিসেবেই আবির্ভূত হয় ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ।
এদিকে, আরেকটা গুঞ্জন ছিল, বিসিবি সভাপতি ফারুকের বন্ধু শফিকুর। তবে বিসিবি সভাপতি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে পরিস্কার করেন, ‘অনেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারী আমার বন্ধু। এটা কীভাবে সম্ভব। ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের শফিকুর রহমানকে আমি আগে কখনোই দেখিনি। তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি করার আগে আমি চারবার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমি তো জানতাম না সে এ রকম।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে শফিকুর, পাওনা দেওয়ার আশ্বাস
পারিশ্রমিক বিতর্কে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পর সবশেষ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে দুর্বার রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির। যেখানে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ২ ফেব্রুয়ারির মাঝেই সব ক্রিকেটারের বেতন পরিশোধ করা হবে। তবে সবশেষ খবর অনুযায়ী, সেটাও হয়নি।
এমন অবস্থায় ৩ ফেব্রুয়ারি দিনের প্রথম প্রহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয় রাজশাহী মালিক শফিকুর রহমানকে। সঙ্কট নিরসনে সমাধান জানতে চাইলে, নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়ে ২৫ শতাংশ হারে ৩, ৭ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তথা তিন কিস্তিতে দলের সমস্ত পাওনা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এ ছাড়া প্রতি কিস্তিতে খেলোয়াড় ছাড়াও দল সংশ্লিষ্ট সকলেই অর্থ বুঝে পাবেন বলেও নিশ্চয়তা দেন শফিক। অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে যে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানিয়েছেন তিনি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ নূর আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।