স্টাফ রিপোর্টার : এবার অনেকটা আগেই মুকুলে ভরছে অনেক বাগান। যত নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। অনেক গাছে মুকুল এরইমধ্যে পরিপুষ্ট হয়েছে। আগাম মুকুলের জোয়ারে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে শীতের কুয়াশা। তবে বাগানিদের প্রত্যাশা, গত বছর যেহেতু মুকুল কম এসেছিলো, এবার ভালো মুকুল আসবে। ভালো ফলনের সঙ্গে লাভবানও হতে পারবেন।
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ি, পবা এলাকার বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। যেসব গাছে এখনো মুকুল আসে নি, সেসব গাছের জন্য বাড়তি যতেœ তৎপর চাষীরা। এছাড়া ফড়িয়ারাও বাগানে বাগানে ঘুরতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মুকুল দেখে বাগান কেনাকাটাও শুরু হবে বলে জানাচ্ছেন তারা।
তবে চাষীরা বলছেন, আগাম মুকুল আসলে কুয়াশার কবলে পড়ার শঙ্কা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমের মুকুলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এতে আমের মুকুল ঝরে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আমের ফলনেও।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এবার শীতের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। কুয়াশার পর রোদ থাকায় নষ্টের পরিবর্তে মুকুল আরও সতেজ হবে। এজন্য কিছু ছত্রাক জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। এরমধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়।
পবার আমচাষী সাবিয়ার আলী বলেন, গত দুই বছর গাছে আশানরূপ মুকুল পায় নি। এবার দেখছি আগে ভাগেই এসেছে। এতে খুশি হয়েছি। তবে শঙ্কাও আছে, কেননা কুয়াশার কবলে পড়লে মুকুল নষ্ট হবে।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগানে গাছে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। অগ্রিম মুকুল আসলে কুয়াশার কারণে একটা শঙ্কা থাকে। আর গত বছরতো ভালো মুকুল আসলেও তা ঝরে পড়ায় সার্বিক উৎপাদনে ভাটা পড়েছিলো। এবার ভালোফলনের প্রত্যাশা করছি। বাকিটা আবহওয়ার উপরে। আর সামনে কিছুদিনের মধ্যে বাগান কেনাবেচা শুরু হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বেশ আগাম মুকুল এসেছে। গত বছর যেহেতু কম মুকুল এসেছে, এবার বেশি মুকুল হবে বলে আশা করছি। আর চাষীদের গাছের প্রতি যতœশীল হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছি।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বড় আম গাছে কোনো বছর মুকুল কম আসলে পরের বছর বেশি আসে। সে হিসাবে বড় গাছগুলোতে মুকুল এবার বেশি আসার কথা। আর ছোট গাছ যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রোপন করেন, তারা যথাযথ যত নেন। একারণে তাদের মুকুলে একরকম সব মৌসুমেই জোয়ার থাকে। আর এবারের আবহওয়া আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সুতরাং আশা করছি, এবার আমাদের মুকুল-গুটি ও উৎপাদন ভালোই হবে। আর কুয়াশার কবলে যদি পড়ে যে ক্ষেত্রে অগ্রিম সতর্ক থাকতে হবে চাষীদের। আমাদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও ট্রেনিংয়ের কারণে আম চাষীরা এখন যথেষ্ট সচেতন।