নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে মন্ত্রিপরিষদ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়ায় আনন্দে ভাসছে উত্তরের জেলা নাটোর। সোমবার (২৮আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
নাটোরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্তভাবে স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত এ জেলার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন সম্পন্ন হলে উচ্চ শিক্ষার দার খুলে যাবে, বাড়বে শিক্ষার হার। সারাদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে উত্তরের জনপদ খ্যাত এই জেলা।
এবিষয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে নাটোরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ সুবিধ কুমার মৈত্র (অলোক) বলেন, এটা তো আমাদের জন্য বড় একটি আনন্দের বিষয়। আমাদের অনেক দিনের প্রত্যাশা ছিলো নাটোরে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেটা আজ আমাদের খুশির বার্তা নিয়ে আসছে। সেই দিক থেকে শিক্ষানগরী রাজশাহীর চেয়ে আমরা নাটোরবাসি এগিয়ে আছি বলে মনে করছেন এই শিক্ষানুরাগি ।
নাটোর আল-মাদ্রাসাতুল জামহুরিয়াল কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আখতার হোসেন বলেন, চলনবিল অধ্যাসিত নাটোর জেলা। এ জেলা কৃষিতে ভরপুর অনেক আগেই একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এর দরকার ছিল। দেরিতে হলেও আমরা নাটোরবাসি পেয়েছি এর পেছনে যারা শ্রম দিছেন তাদের জন্য দোয়া করি। সেই সাথে দ্রুততম সময়ে এর বাস্তবায়ন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
নাটোর দিঘাপতিয়া এমকে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নাটোর ইতিহাস-ঐতিয্যের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষার দিক থেকে আমরা অবহেলিত। এই এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জেলাবাসীর বহুদিনের দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন এতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিস্তৃত লাভ করবে। এটার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নাটোর সদর-২আসনের সংসদ সদস্য শিমুল ও সিংড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী পলক নিরন্তর পরিশ্রম করেছেন। তারই ফসল আজ নাটোরে বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বর্তমার সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। নাটোর শিল্প ভিত্তিক না হলেও কৃষি ভিত্তিক জেলা। সেই দিক বিবেচোনা করেই আমরা নাটোরে একটি কৃষি বিশ ^বিদ্যালয়ের বাদী করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আজ আমার এবং জনগণের অনুভূতি অনেক ভালো। কেন না, নাটোরে এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হবে। আর লেখাপড়ার মান অনেক বেড়ে যাবে। আমরা অত্যন্ত খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, এটা তো আমাদের জন্য আনন্দের খবর। প্রধানমন্ত্রীর স্বামীড. এম ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি এই বঙ্গে। এই মাস শোকের মাস, সেই মাসে একটি খুশির খবর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই উত্তর বঙ্গের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এটাকে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই জন্য নাটোর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা। এই ঋণ কখনো ভুলবে না। ‘নাটোর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ এর নামে সারা বিশ্ব চিনবে নাটোরকে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁইঞা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের খবরটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্যারের এই বিষয়ে এক ব্রিফিং করেছেন স্যারের দিক নির্দেশনা মত এই কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। নাটোরবাসির সাথে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।শিক্ষার শহর হবে নাটোর।
উল্লেখ্য ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে ওয়াজেদ মিয়ার জন্ম। প্রয়াত আবদুল কাদের মিয়া ও ময়জান নেছার সন্তান ওয়াজেদ মিয়া ‘সুধা মিয়া’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন।১৯৬৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরে আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।