Home রাজশাহী রুয়েটের সেই কর্মকর্তা মিলনুর সাময়িক বরখাস্ত

রুয়েটের সেই কর্মকর্তা মিলনুর সাময়িক বরখাস্ত

রুয়েটের সেই কর্মকর্তা মিলনুর সাময়িক বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সেই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রের (অফিস আদেশ) মাধ্যমে তাকে বহিস্কার করা হয়।

আদেশে বলা হয়েছে- উপর্যুক্ত বিষয়ে আপনাকে অবহিত করা যাচ্ছে যে, গত ২৮ আগস্ট জাতির পিতাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পর্শকাতর বিষয় শেয়ার করায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এবং তদন্ত কমিটির তদন্তের স্বার্থে আপনাকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন আপনি খোরপোষ ভাতাসহ প্রাপ্ত ভাতাদি পাবেন।

রুয়েট জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মুরতুজা গণমাধ্যম কর্মীদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং ঘটনাটি তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মিলনুর রশিদ। তিনি রুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার। এই ঘটনা জানাজানি হলে সোমবার (২৮ আগস্ট) সেই কর্মকর্তাকে তার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধিনস্ত ‘ফাউন্ড্রীশপ চেম্বার’ থেকে তাকে বের করে তালা মারা হয়। এছাড়া অভিযুক্ত মিলনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছিল ছাত্রলীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার এমন ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথ মুস্তাফিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস-চ্যান্সেলর। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- বিশ্ববিদ্যায়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি।

উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে সম্প্রতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন রুয়েটের কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ পুরো রাজশাহীজুড়ে সমালোচনা ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়। শুধু মিলনুর রশিদ নন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবেক শিবির নেতা মো. আহসান হাবীব। তবে গত সোমবার রুয়েট প্রশাসন সতর্কতামূলক একটি নোটিশ জারি করেছিলো। সেখানে বলা হয়েছিল, রুয়েটের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শিক্ষার্থী বর্ণিত বিষয়ে কোনো স্পর্শকাতর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট কিংবা শেয়ার করলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহসান হাবীব তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সাঈদীকে নিয়ে শেয়ার করা ভিডিওটি ডিলিট করে।

এ বিষয়ে আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি না বুঝেই শেয়ার করেছিলাম। পরে বুঝতে পেরে আমার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এটি ডিলিট করে দিয়েছি।‘

রুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যেহেতু ওই কর্মকর্তা (মিলনুর) জাতির পিতাকে নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট শেয়ার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেজন্য তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটির গঠন করে কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রুয়েট ভিসি বলেন, ‘অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এমন ঔদ্ধত্যতা দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করে থাকলে তদন্ত কমিটিকে তাদের বিষয়েও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে করা হয়েছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here