• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

৪২ বছর ধরে বস্তির কুঁড়েঘরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা’র স্ত্রী আনোয়ারা

প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৭:০৯

৪২ বছর ধরে বস্তির কুঁড়েঘরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা’র স্ত্রী আনোয়ারা

মীর তোফায়েল হোসেন : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনের সব কিছু হারিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জলিল শাহ এর নিঃসন্তান স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭৫)। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর দেয়া কৃতজ্ঞতা পত্র আর দুই হাজার টাকা ছাড়া বিজয়ের এত বছরেও মেলেনি সরকারি বেসরকারি কোন সহায়তা। রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকায় বাদুরতলা বদ্ধভুমির পাশে জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে কেটে গেছে তার ৪২ বছর। বৃদ্ধ বয়সেও দুবেলা দু-মুঠো খাবারের জন্য অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে বেড়াতে হয় প্রতিনিয়ত।
রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের ধারেই ভাঙাচোরা এই ছোট্ট ঘরেই বসবাস বৃদ্ধ আনোয়ারা বেগমের। সহায় সম্বল বলতে নড়বড়ে ঘুণেধরা একটা চৌকি,থালাবাটি আর একটা বাক্স। প্রতিবেশীর দয়ায় বেঁচে থাকা ৭৫ বছর বয়সী এই মানুষটি আজ বড় অসহায়।
খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিল আনোয়ারা বেগমের। সে সময় সব কিছুই ছিল তার। স্বামী জলিল শাহ ছিলেন বড় ঠিকাদার। নগরীর তালাইমারি বাদুরতলা এলাকাতেই ছিল তার দোতালাবাড়ি। বাড়িটি এখনও আছে কিন্তু সেখানে বসবাস করে অন্যেরা। বাড়িটির পাশের বস্তিতেই আনোয়ারার বসবাস।
স্বামী বেঁচে থাকতে সুখেই দিন কাটছিল আনোয়ারার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি তার কপালে। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সেদিন মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বুলেট কেড়ে নেয় জলিল শাহ এর প্রাণ। বিয়ের মাত্র ৭ বছরের মাথায় সুখের প্রদীপ নিভে যায় আনোয়ারার । সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে নিঃসঙ্গতায় আজও বেঁচে আছেন এই অভাগিনী।
নগরীর তালাইমারি শহিদমিনারে স্থাপিত ফলকে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে জলিল শাহ এর নাম। স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেউ খোঁজ রাখেনি তার। বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে গেছে আনোয়ারার দীর্ঘশ্বাস। লাখো শহীদের রক্তে কেনা লালসবুজ পতাকা ওড়ে দেশজুড়ে, মাথা উঁচু করে বুকে হাত রেখে বলি আমরা বিজয়ীর জাতি আমরা স্বাধীন। কিন্তু আনোয়ারার সাদা শাড়ি জরাজীর্ণ হয় বস্তির কুঁড়ে ঘরে।

কথা হয় তার সাথে, প্রশ্ন করতেই অশ্রæভেজা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন দেশকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়েছিল আমার স্বামী জলিল শাহ। পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতে আমাকে রেখে এসেছিলেন দুর্গাপুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। মাঝে মাঝেই আমাকে দেখতে যেতেন। শেষ দেখায় বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুসহ দেশকে বাঁচাতে যাচ্ছি, হয়ত আর দেখা হবেনা। আর দেখা হয়নি। স্বাধীনতার পরে এসে জানতে পারি আমার স্বামীসহ আরো তিনজনকে একসাথে হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী। আমার বাড়ি লুট হয়েছে জ্বালেিয় দিয়েছে সবকিছু। প্রিয় স্বামীর লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমি গর্বিত আমার স্বামীর রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই অনুভূতি নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছি আমি। বাকি জীবনটাও হয়ত এভাবেই কেটে যাবে।
জীবন জীবিকার তাগিদে একসময় বাড়িবাড়ি গিয়ে হোমিও ঔষধ বিক্রি করতেন বলে এলাকায় ডাক্তার নানি হিসেবেই পরিচিতি তার। তাই প্রতিবেসিরাই এখন তার ভরসা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই হতভাগিনীর জীবন গাড়ির চাকা আজ থেমে যাওয়ার পথে।
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি বা বেসরকারি কোনো অনুদান । মুক্তিযোদ্ধা নেতারা বলছেন, এখনি সময় আনোয়ারাদের জন্য কিছু করার। এসব অবহেলিতদের পাশে এসে দাঁড়াতে সরকার এবং বিত্তবানদের প্রতি আহবার তাদের।

আরও পড়ুনঃ  ‘লাট সাহেব’ বলায় রিকশাচালককে জুতাপেটা করলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675