স্টাফ রিপোর্টার: সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখনও সময় আছে। সংসদ বিলুপ্ত করেন। নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেন। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যথায় এই সরকারকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে। আমরা এবার রাজপথ থেকে সরে যাব না। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ফিরব।’
রোববার রাতে রাজশাহী নগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোডমার্চ শেষে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বগুড়া থেকে আসা এই রোডমার্চে নেতৃত্ব দেন ফখরুল। বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে রাজশাহী আসার পথে বিভিন্ন স্থানে পথসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির এই নেতা।
রাজশাহীর সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই সরকার আবারও নির্বাচন নির্বাচন পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা পাতানো খেলা আর খেলতে দেব না। আপনাদের রাজশাহীর নেতা আবু সাঈদ চাঁদ, শফিকুল হক মিলনকে মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। সারাদেশে আজকে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র নেতাকে জেলে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ নির্যাতিত-নিষ্পেষিত। এর বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছর এই জাতির ওপর বুকের পাথরের মতো বসে আছে। আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে যা অর্জন করেছিলাম, সেটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এটি করতে গিয়ে যারা গণতন্ত্রের কর্মী তাদের হত্যা করেছে, গুম করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আজকে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। আজকে দেশনেত্রীকে বিনা চিকিৎসায় রেখেছে। বাইরে যেতে দিচ্ছে না। সরকারকে বলব, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব হাসিনা সরকারকে নিতে হবে।’
রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসির ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড প্রসঙ্গেও সমাবেশে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনাদের চারঘাট থানার ওসির অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। ওসি বলেছে, তাকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এনেছেন নির্বাচন করার জন্য। বলেছে, “আমাকে এনেছে মন্ত্রী, নির্বাচন করার জন্য। মন্ত্রী যা বলবে আমি তাই শুনবো। আজকে সারাদেশে এই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। কিন্তু মানুষ আজ জেগে উঠেছে।’
এই রোডমার্চ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। বাচ্চাদের ডিম দিতে পারেন? ভাল খাবার দিতে পারেন? পারেন না। বিদ্যুতের দাম বাড়তেই আছে। সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকটা মানুষ চায় এই সরকার বিদায় হোক। বগুড়া থেকে এলাম, বৃদ্ধরা-শিশুরা সব লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেছে। বলেছে, তারা দুটি জিনিস চায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি। আজ বিশ^বাসী বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এই সরকারকে মানুষ আর দেখতে চায় না।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা।