নিউমোনিয়ার প্রকোপ,রামেক হাসপাতালে ২১০০ শিশু

নিউমোনিয়ার প্রকোপ,রামেক হাসপাতালে ২১০০ শিশু

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত সাড়ে তিন মাসে ২ হাজার ১০৯ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।

চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন একশ শিশু ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। আর এর ফলে রাজশাহীতে নিউমোনিয়ার স্যালাইনের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৬৫ টাকা দামের স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার দুইশ টাকা দামে।

এদিকে চাপ বেড়ে যাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডগুলোর বারান্দাতেও ঠাঁই হচ্ছে না রোগীদের। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। আবার রোগীর স্বজনরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়।

রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকাটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাড়া বলে পরিচিত। এ এলাকা ঘিরেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ওষুধের দোকান। ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপিএন স্যালাইনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। আবার চাহিদামতো স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

রামেক হাসপাতালের ৯, ১০ ও ২৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের প্রচুর ভিড়। ভর্তি হওয়া শিশুদের অভিভাবকদের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতরে ধাপ ফেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা ওয়ার্ডের বারান্দাতেও। বিশেষ করে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা দুর্গাপুরের পালি এলাকার শিশু আকবর আলীর বাবা দেলশাদ হোসেন বলেন, ‘ আমার শিশুকে গত ১৪ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন একটু ভালো আছে। প্রথম দিকে খুব খারাপ অবস্থা ছিল। চিকিৎসার জন্য স্যালাইনও পাওয়া যাচ্ছিল না। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে গেলেও পাওয়া যাচ্ছিল না। ৬৫ টাকার স্যালাাইন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে।’

আরও পড়ুনঃ  সিএনজি স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১

ওই ওয়ার্ডের আরেক শিশুর অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিক। কিন্তু রোগীর চাপে সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার স্যালাইনও পাওয়া যাচ্ছে না। একটা স্যালইন কিনতে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা লাগছে। এতো টাকা পাবো কুণ্ঠে?’

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে বিশেষ অভিযানে ৪ জনসহ অন্যান্য অভিযোগে গ্রেপ্তার ২১

আরেক রোগীর অভিভাক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এখনো অবস্থা তেমন ভালো না। চিকিৎসকরা প্রতিদিন এপিএন, বেবি সল্টসহ বিভিন্ন স্যালাইন লিখছেন। হাসপাতালে স্যালাইন তেমন সাপ্লাই নাই। তাই বাইরে থেকেই বেশি কিনতে হচ্ছে। দোকানদাররা বলছেন স্যালাইন নাই। তবে বেশি দাম দিতে চাইলে ফার্মেসির লোকেরা এনে দিচ্ছেন।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রাজশাহী শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, নিউমোনিয়া আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু কম্পানিগুলো সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। যার কারণে দাম বেড়েছে। কিন্তু ৬৫ টাকার স্যালাইন ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘কলেরা ও নিউমোনিয়ার স্যালাইন সঙ্কট আছে। এ কারণে বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে দেওয়া হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তবে অনেকেই এসে বলছেন বাইরে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে চিকিৎসা দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বাড়তি দাম দিয়ে কিনে আনছেন।’

আরও পড়ুনঃ  চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ধর্ষক গ্রেফতার!

রাজশাহী মেডিক্যোল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শাহিদা ইয়াসমিন জানান, প্রতিদিন গড়ে গত কয়েকদিন ধরে ১০০ থেকে ১৩০ জন করে শিশু ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে। সর্বশেষ গত বুধবার ভর্তি হয়েছে ৮৪ জন। আর গত অক্টোবর মাসে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ শিশু। শিশু বিভাগের চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে এ সময়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ৫ শিশু মারা গেছে। আর গত আগস্ট থেকে চলতি নভেম্বর পর্যন্ত মোট নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১০৯ জন।

তবে স্যালাইন সংকট নেই দাবি করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, শিশু রোগীর চাপ আছে ঠিক। তবে চিকিৎসা কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চলছে। চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *