অনলাইন ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। বর্তমানে ওই জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। পণ্য বহনকারী জাহাজে ২৩ জন নাবিকের মধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মো. সাব্বির হোসেনও রয়েছেন। তিনি উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে সাব্বিরের পরিবার গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারেন জাহাজটি জলদস্যুরা আটক করে সোমালিয়ায় তাদের সুবিধামত জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার প্যারাইলাইজড বাবাসহ মা ও একমাত্র বোন। একমাত্র ছেলের জিম্মির খবর শুনে বাবা হারুন অর রশিদ হাউ মাউ করে কাঁদছেন, মা সালেহা বেগম বিলাপ করছেন। একমাত্র বোন মিতু আক্তার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন। গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে তাদের শান্তনা দিচ্ছেন। জিম্মির খবর পেয়ে স্বজনরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। সাব্বিরকে ফেরত পেতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাব্বিররা দুই ভাইবোন। তার পরিবার সচ্ছল নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় সাব্বির ছোটবেলা থেকেই তার মামার বাড়ি সহবতপুর ইউনিয়নের কাজির পাচুরিয়ার এলাকায় থাকতেন এবং সেখান থেকেই পড়াশোনা করেছে। সাব্বিরের বাবা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবপুর বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না। একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বিরের কিছু হয়ে গেলে তাদের আর চলার উপায় থাকবে না।
তিনি আরও জানান, খবরের মাধ্যমে তার নাম শুনেছি। পরে টিভিতে দেখলাম তাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তারা জাহাজ সোমালিয়ায় নিয়ে গেছে। গতকাল দুপুর থেকেই সাব্বিরের ফোন বন্ধ। কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। এখনও পরিবারের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। মুক্তিপণ চেয়েছে কিনা সরকারের কাছে জানি না। তবে যতদ্রুত সম্ভব সাব্বিরসহ সবাইকে যেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় সরকারের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি।
সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ সোমবার কথা হয়েছে। এর আগে আমার ফোনে তার মাথা ন্যাড়া করার ছবি পাঠিয়েছে। সাগরের কি যেন রেখা অতিক্রম করার পর জুনিয়রদের মাথা ন্যাড়া করতে হয়। এটা নিয়ে আমরা ভাই বোন হাসাহাসি করেছি। পরে বিকেলের পর আবার ফোন করে সাব্বির। বললো বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। পরে আর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে এমন খবর গণমাধ্যমে দেখার পর থেকে যোগাযোগ করতে পারিনি বন্ধ থাকার কারণে। বাবা-মা এখন শুধু কাঁদছে শান্তনাও দিতে পারছি না। সরকার থেকেও কোনো সুখবর পাচ্ছি না। আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। আশা করি দ্রুত সুখবর পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, সাব্বির হোসেন সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করে। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে এইচএসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।