স্বাভাবিক হলো বিশ্ববিদ্যালয়  এক শিক্ষকের ক্লাস বর্জন

স্বাভাবিক হলো বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষকের ক্লাস বর্জন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় দুইদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে পুনরায় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিরচেনা সেই আড্ডা চোখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কেও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এখনো মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এদিকে শিক্ষার্থীরা এখনো অসুস্থ থাকায় ক্লাস বর্জন করেছেন অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষক।

মঙ্গলবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের সব দোকানপাট খুলতে শুরু করে। টুকিটাকি চত্বর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের সামনে, পরিবহন মার্কেটের দোকানগুলোয় ফিরেছে শিক্ষার্থীদের কোলাহল। চায়ের দোকানগুলোতেও চলছে আড্ডা। সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস শুরু হয়েছে। সকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বহন করা বাসগুলোও।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্ধোধন

এদিকে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ও পুলিশের ‘ন্যাক্কারজনক’ হামলার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এক শিক্ষক। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে এ খালি পায়ে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তিনি। প্রতিবাদ জানানো ওই শিক্ষকের নাম ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক।

কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ যে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে এর প্রতিবাদ আমি এখানে অবস্থান নিয়েছি। পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের হামলায় এবং পরবর্তীতে পুলিশের গুলিতে বিশ^বিদ্যালয়ের এতো শিক্ষার্থী আহত হলো এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি অভিভাবক হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করছি কারণ আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে। তাদের মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হয়নি, সেলাই এখনো কাটা হয়নি। এই অবস্থায় তারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে না। আমি তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ক্লাস বর্জন করেছি।

আরও পড়ুনঃ  রমনা বটমূলে গানে গানে বর্ষবরণ, গাজায় নিহতদের স্মরণ

হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুতেই ঘটনাটি যে কারণেই ঘটুক না কেন পুলিশ ও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘ সময় পেয়েছে ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং এর পরিণতি হয়েছে চরম ভয়াবহ। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে যারা এই হামলার সাথে সম্পৃক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক।

শিক্ষার্থীদের ৬দফা দাবির বিষয়ে আলোচনার জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সাথে আলোচনায় বসেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। আলোচনায় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ^াস দেন উপাচার্য। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, এর আগে উপাচার্যকে আমরা ৬টি দাবি জানিয়েছি। দাবিগুলো নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সর্বোপরি উপাচার্যে ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক চলছে

এদিকে ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা ও বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের সকল দোকান রাত সাড়ে ৮ টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা যদি শৃঙ্খল ও সুন্দর ক্যাম্পাস চাই তাহলে দোকানগুলো বড় একটা ফ্যাক্টর। দোকানগুলো খোলা থাকার কারণে বহিরাগতদের আনাগোনা বেশি থাকে। শিক্ষার্থীরাও চায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা কম থাকুক। আমরা যদি ধীরে ধীরে এই বিষয়গুলোকে স্টাবলিশ করতে পারি তাহলে সুন্দর ও নিরাপদ ক্যাম্পাস সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *