Home নওগাঁ নওগাঁর দুই পরিবার খোলা আকাশের নিচে

নওগাঁর দুই পরিবার খোলা আকাশের নিচে

নওগাঁর দুই পরিবার খোলা আকাশের নিচে

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কোনো নোটিশ ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে দরিদ্র একটি অসহায় পরিবারের বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন তিনি। অন্য আরেকটি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দিয়েছেন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারগুলো। জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে পত্নীতলা উপজেলার অর্জুনপুর গ্রামে ভ্যাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন। এসময় তিনি আদেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ওই গ্রামের বাসিন্দা হাচান আলীর পরিবারের টিনশেড ও বেড়ার তৈরি ঘরবাড়ি ভেঙে দেন। এর পর পাশের সাদেকুল ইসলামের পরিবারের সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেন ইউএনও। ঘটনার পর থেকে হাচানের পরিবার ভাংচুর করা বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। সাদেকুল ইসলামের পরিবার প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
ভূক্তভোগী হাচান আলী অর্জুনপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে তাদের পরিবার একটি খাস জমিতে বসবাস করে আসছিলো। তিনি ২০১১ সালে আড়াই শতক খাস জমি বন্দোবস্ত পান। সেই কবিলিয়ত পত্রে তার স্ত্রী হাবিবা বিবির নামও রয়েছে।
বাড়িতে দুটি শোবার ঘর, টিউবয়েল, টয়লেট, হাঁস মুরগির ঘর, গরু ছাগল রাখার ঘর ও রান্নাঘর ছিলো। বেড়া দিয়ে তৈরি সেই ঘরের পাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে দুটি ঘর বানানোর উদ্যোগ নিলে স্থানীয় মহিলা মেম্বার রুজিনা আকতার বাধা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। উৎকোচের টাকা না দেয়ায় ষড়যন্ত্র শুরু করে।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও মহিলা মেম্বার রুজিনা নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। সেই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ম্যানে করে অমানবিকভাবে ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বাড়িঘর ভেঙে দেয়ার পর থেকে সংসারের ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও শিশু সন্তানদের নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার জানান তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী সাদেকুল ইসলাম বলেন, হাচানের বাবা ইদ্রিস আলী চিকিৎসার টাকা যোগার করতে বাড়িঘরের টিন ও অন্যান্য আসবাবপত্র বিক্রি করেন। ৭০ হাজার টাকায় সেসব আসবাবপত্র কিনে নেন। ইদ্রিস আলী মারা যাবার পর থেকে বাড়িটি পড়ে আছে। শুধুমাত্র আসবাব পত্রগুলো কেনার কারণেই দোষী সাবস্ত্য করেছেন ইউএনও। এরপর বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দিয়েছেন। এর পর থেকে পরিবার নিয়ে ভাসমান অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। গরু ছাগল ও হাঁস মুরগি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের জানান তিনি।
স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার ইয়াছিন আলী জানান, ২০১১ সালে এলাকার ২৭ টি পরিবারকে ৭২ শতাংশ জমি কবিলিয়ত পত্রের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।জমিতে সুবিধামত বসবাস করে আসছেন পরিবারগুলো। ২৭ টি পরিবারের মধ্যে মাসুদা বিবি ও রফিকুল ইসলাম দম্পতি ৪ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু তারা ভোগ দখলে আসেনি। দীর্ঘদিন পর এসে হাচানের বাড়ির জমিটি তার দাবি করলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হাচান যেখানে বাড়ি করে বসবাস করছে সেই জমির পরিমাণ আড়াই শতাংশ। হাচানের বাড়ি ভাংচুর ও সাদেকুলের বাড়িতে তালা দিয়ে সিলগালা করার ঘটনা ন্যায়সঙ্গত হয়নি মন্তব্য করেন তিনি।
অর্জুনপুর গ্রামের বর্তমান মেম্বার হারুর অর রশিদ বলেন, মাসুদা বিবি জমির পাওয়ার পরও দীর্ঘদিন তার বাবার বাড়িতে ও ঢাকায় ছিলেন। বছর খানেক আগে গ্রামে ফিরে এসে সড়কের পাশে একটি জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছেন। কবিলিয়ত পত্র অনুসারে তিনি ৪ শতাংশ জমির মালিক। অনেক জমি ফাঁকা পড়ে আছে। সেসব জায়গায় মাসুদা বিবিকে দখল দিলেই সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় মহিলা মেম্বার রুজিনা আকতার বলেন, হাচান ও তার বাবা মিলে ইতোপূর্বে যে বাড়িতে বসবাস করে আসছিলো সেই বাড়িটে তারা সাদেকুলের কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেছে। পরবর্তীতে আরেকটি জায়গা দখল করার সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়। উৎকোচ চাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন রুজিনা আকতার।
নির্মইল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো ঘটনা নেই। অভিযোগকারীরা মিথ্যা বলেছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় তিনি ছিলেন না। বাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ বসবাস করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। এর সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই জানান তিনি।
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন বলেন, বন্দোবস্ত দেয়া জমিগুলো নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন হাচান আলী ও সাদেকুল ইসলাম। তাদের কারণে মাসুদা বিবি জমির দখল পাচ্ছেন না। এই সমস্যাটি সমাধানে কয়েকবার তাদেরকে বৈঠকে ডাকা হয়। কিন্তু তারা সাড়া না দিয়ে পালিয়ে বেড়ান। অবশেষে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হাচানকে বর্তমান জমি থেকে উচ্ছেদ করে সাবেক বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পালিয়ে বেড়ানোর কারণে সাদেকুলের বাড়িতে তালা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলছেন নওগাঁ জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ডিএম আব্দুল বারি। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ ধরনের নির্দেশ দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here