স্বাভাবিক হয়েছে কানসাট আম বাজার

স্বাভাবিক হয়েছে কানসাট আম বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: যতদূর চোখ যায় চারদিকে শুধু আম আর আম। ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪, আশ্বিনাসহ নানা জাতের আমের সমারোহ। ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষির মাধ্যমে মুখর বাজার। ভ্যানে খাঁচাভর্তি আম নিয়ে অপেক্ষা করছেন আমচাষিরা। বাজার ঘুরে ঘুরে দর-দাম করে আম কিনছেন ব্যাপারীরা। মূল বাজার পেরিয়ে আমভর্তি ভ্যান গেছে আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আমের বাজারে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল, তা দূর হচ্ছে। আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আমের বাজার। কয়েকদিন স্থবিরতা থাকলেও বর্তমানে আমের ব্যাপারী, শ্রমিক ও ক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত কানসাট আমবাজার। চলমান কোটা আন্দোলনকে ঘিরে এই আমবাজারে স্থবিরতা দেখা যায়। ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে না পারায় আম কেনা বন্ধ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা। ফলে গাছেই পেঁকে নষ্ট হয় পরিপক্ব আম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমচাষিরা। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই স্বাভাবিক হতে শুরু করে আমবাজার।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে আমের বাজার ভালো। কারফিউ শিথিল করায় আম কেনা-বেচায় বেড়েছে গতি। প্রাণ ফিরেছে আমবাজারে। আমচাষি রুবেল আলী জানান, আমচাষিরা খুশি যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখন বড় সমস্যা হচ্ছে, ব্যাপারীদের কাছ থেকে নগদ টাকা পাচ্ছেন খুবই কম। কারণ তারাও ব্যাংক থেকে চাহিদামতো টাকা পাচ্ছেন না। ফলে বাকিতে আম বিক্রি করে টাকা পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে চাষিদের।
তরিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানান, বর্তমানে কানসাট আমবাজারে ফজলী সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, আশ্বিনা ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে আম বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি যত উন্নয়ন হচ্ছে, ততো দাম বাড়ছে। আন্দোলনের সময়ে কয়েকদিন যে ক্ষতি হয়েছে, আশা করা যায় তা পুশিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে আড়তদার, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম শ্রমিক, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজার আবার আগের অবস্থায় ফিরেছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে কানসাট আমবাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসছে আম কিনতে। আমচাষীরাও পরিপক্ব হয়ে থাকা আম গাছ থেকে পেড়ে বাজারে নিয়ে আসছেন।
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, কানসাট আমের বাজারে প্রতিদিন ২৫-২৬ কোটি টাকার আম বিক্রি হতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে তা নেমে আসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকায়। ভয়ে কেউ ট্রাক ভাড়া দিতে চাচ্ছিলেন না। কানসাটে প্রায় ৫শ’ আড়তে আম কেনাবেচা হয়। কাজ করেন হাজারো শ্রমিক।
জেলায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাজারমূল্যের আমকে রক্ষায় আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখার দাবি কৃষক নেতাদের। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, আন্দোলনের সময়ে রাজধানী ঢাকায় আম পাঠাতে না পারলেও নানা উপায়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আম সরবরাহ করেন আমচাষিরা। কিন্তু আগামীতে পচনশীল পন্য আম সম্পদ রক্ষায় এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখার দাবি জানায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবীব বলেন, যেকোনো বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ থাকতেই পারে। তবে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী এই ফলের উপর যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানায়। তা না হলে হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন ধ্বংস নষ্ট হবে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *