গুম হওয়া ৩ জনকে ফিরে পেতে আকুতি

গুম হওয়া ৩ জনকে ফিরে পেতে আকুতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একই পরিবারের দুই ভাই মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিম এবং সোনামসজিদের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলামকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছেন স্বজনেরা। তাঁরা তিনজনের সন্ধান চেয়ে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

স্বজনদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তিনজনকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। এরপর বাহিনীর দপ্তরে বারবার ঘুরেও তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার পরও তাঁদের ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনেরা।

দুই ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবরে স্ট্রোক করে মারা গেছেন মিজানুর ও রেজাউলের মা। তাঁদের বৃদ্ধ বাবা মো. আইন-আল হক জানান, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট মুসলিমপুরের বাড়ি থেকে মিজানুরকে তুলে নিয়ে যান শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহ আলমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে বড় ভাইকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তদবির করেন ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল। এরপর একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহীর এসএস প্লাজা ছাত্রাবাস থেকে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যান সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা। তখন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন দুই ভাই।

আরও পড়ুনঃ  সিএনজি স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১

পরিবারের অভিযোগ, রেজাউলের বিষয়ে পুলিশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিলেও মিজানুরের জিডি নেয়নি। অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান বাবা আইন-আল হক। তিনি বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ বয়সে ছেলেদের মুখ দেখার জন্য বেঁচে আছি।’

আরও পড়ুনঃ  লালবাগে স্কুলছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, পরিবারের দাবি আত্মহত্যা

মিজানুরের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সন্তানেরা বাবার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কী জবাব দেব তাদের। তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না।’

নিখোঁজ মিজানুর ও রেজাউলের বড় ভাই সেতাউর রহমান বলেন, ‘এখন তো গুম হওয়া বেশ কিছু মানুষ পরিবারের কাছে ফিরে আসছেন। আমরাও আশা করি দুই ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যদি ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তবে যাঁরা দিনদুপুরে আমার ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

এদিকে ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় একই উপজেলার বালিয়াদীঘি গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুলকে। এরপর শিবগঞ্জ থানার পুলিশ জিডি নিলেও উদ্ধার করতে পারেনি তাঁকে। মফিজুলের স্ত্রী লাইলি বেগম বলেন, ‘স্বামী নিখোঁজের পর র‍্যাব-পুলিশের সব জায়গায় খোঁজ করেছি। কেউ সহযোগিতা করেনি। এমনকি স্বামীর সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারিনি। এখন আমার তিন সন্তান বাবাকে উদ্ধারে রাস্তায় নেমেছে। জীবিত অথবা মৃত স্বামীকে ফেরত চাই।’

আরও পড়ুনঃ  নাটোরে মাদ্রাসার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক ৮

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবুল কালাম সাহিদ বলেন, ‘যখন শিবগঞ্জের তিন ব্যক্তি নিখোঁজ হন, তখন আমরা দায়িত্বে ছিলাম না। যাঁরা সে সময় দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *