স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের আগে নিজেদের ১১ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন মালিক সমিতি। ফলে সব জেলার সঙ্গেই রাজশাহীর বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে।
গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে এক সভা করে মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১১টি দাবি জানায় পরিবহন মালিক সমিতি। দাবি আদায় না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। পরিবহন মালিকদের এসব দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোন পর্যায় থেকে আলোচনা করা হয়নি। তাই আল্টিমেটাম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এই পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ধর্মঘট শুরুর আগে বুধবার থেকে নেতাকর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই ধর্মঘটের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সমাবেশে নেতাকর্মীদের আগমন ঠেকাতে এই ধর্মঘট সরকারই চাপিয়ে দিয়েছে।
যদিও তা অস্বীকার করে রাজশাহী জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো দাবি করেছেন, তারা তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি রাজশাহীতে এক সংবাদ সম্মেলন করেও এ দাবি জানানো হয়। তারপর আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর নওদাপাড়ায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাসও ছেড়ে যাচ্ছে না। কোন বাস টার্মিনালে আসছেও না। শিরোইল বাস টার্মিনালে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। শ্রমিকেরা এখানে-ওখানে বসে গল্প-আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তবে ধর্মঘটের ব্যাপারে আগে থেকেই সাধারণ মানুষ জানেন বলে দুই টার্মিনালে যাত্রীদের কোন চাপ দেখা যায়নি। কোন যাত্রী দেখা যায়নি শিরোইল ঢাকা স্ট্যান্ড কিংবা ভদ্রা স্ট্যান্ডেও। শিরোইলের দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ আছে। ধর্মঘটের সুযোগে দু’একটি কাউন্টারের ভেতরে সংস্কার কাজ শুরু করতে দেখা গেছে।
নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় মাইক্রো স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। মাইক্রোবাস চালক রবিউল ইসলাম জানান, ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকায় তাদের গাড়ি ঢাকা যাচ্ছে। হঠাৎ জরুরিভাবে যেতেই হবে এ রকম কয়েকজন যাত্রী একত্রিত হয়ে গাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন। তবে অনেকেই আগেভাগেই রাজশাহী এসেছেন কিংবা কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে চলে গেছেন। যাত্রীর চাপ খুব বেশি নেই।
শহরের রেলগেট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকে পাশের জেলা নওগাঁ এবং রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় সিএনজি ছেড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে অন্যদিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ কিছুটা দেখা গেছে। স্টেশনে ট্রেনের জন্য বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের অপেক্ষাও দেখা গেছে।
রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, কাউন্টার এবং অনলাইনে চার তারিখ পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে গেছে। সকাল থেকে ট্রেনে যাত্রীর চাপও কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে। সব রুটে সময়মতো ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।