বিচার বিভাগ হবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত, ভোগ করবে স্বাধীনতার সুফল

বিচার বিভাগ হবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত, ভোগ করবে স্বাধীনতার সুফল

অনলাইন ডেস্ক : ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে নতুন বছরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ইতিমধ্যে তিনি একটি পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছেন। রোডম্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন বছর হবে বিচার বিভাগের জন্য ‘নবযাত্রার একটি বছর’-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। একইসঙ্গে ২০২৫ সালেই বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এভাবে রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগ জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।

এদিকে নতুন বছরকে সামনে রেখে মঙ্গলবার বিচার বিভাগ নিয়ে প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশা ও পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২ জানুয়ারি হতে হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি সংক্রান্ত একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে উক্ত বেঞ্চের সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও কাগজমুক্ত কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের জেলা আদালতসমূহেও সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

আরও পড়ুনঃ  নারায়ণগঞ্জে ঝুটের গোডাউনে আগুন

সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা কি এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে কি করণীয় বা কিরূপ সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন-সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে নতুন বছরে সকল বিভাগীয় শহরে অবস্থিত আদালতসমূহে স্টেকহোল্ডার মিটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রোডম্যাপ বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ।

আরও পড়ুনঃ  বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে রপ্তানি বহুমুখীকরণের চেষ্টা থাকবে

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেন বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন তিনি। রোডম্যাপে বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিতে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

এছাড়া, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ পিটিশন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করায় সংবিধানে পুনর্বহাল হয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে এই কাউন্সিল। দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। বিশেষ করে, সুপ্রিম কোর্টের সেবার মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি বারো দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। দেশের আদালতসমূহে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নাম্বার। হেল্পলাইনে কল করে সেবাগ্রহীতা প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন কিংবা যে কোনো অনিয়ম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ধর্ষক গ্রেফতার!

প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনাপূর্বক সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। উপর্যুক্ত পদক্ষেপসমূহের কারণে সেবাগ্রহীতাগণ ইতোমধ্যে উন্নত বিচারসেবার প্রাপ্তির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য পরিকল্পনাসমূহও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিশেষ করে, ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত দৃঢ়কল্প। দেশের উচ্চ ও জেলা আদালতসমূহের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিসিয়ারির আওতায় আনতে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।-ইত্তেফাক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *