Home ময়মনসিংহ নিম পাতা ও চিংড়ি থেকে এন্টিবায়োটিকে নতুন সম্ভাবনা : বাকৃবির গবেষণা

নিম পাতা ও চিংড়ি থেকে এন্টিবায়োটিকে নতুন সম্ভাবনা : বাকৃবির গবেষণা

নিম পাতা ও চিংড়ি থেকে এন্টিবায়োটিকে নতুন সম্ভাবনা : বাকৃবির গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক : সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (বিএসভিইআর)-এর আয়োজনে ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শেষ হয়েছে

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি মোট পাঁচ শতাধিক গবেষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণে ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে গবেষণা মূলক ৯০টি মৌখিক এবং ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়। তবে এর মধ্যে বাকৃবির উদ্ভাবিত জৈব এন্টিবায়োটিক সবার নজর কেড়েছে।

নিম পাতার নির্যাস থেকে এন্টিবায়োটিক:এন্টিবায়োটিক সহজলভ্য হওয়ায় প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। তবে, পোল্ট্রি উৎপাদনে এান্টিবায়োটিকের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা যায়। ফলে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পোলট্রির দেহে অণুজীব সহনশীলতা বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। এতে মাংস ও ডিম উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশাপাশি এটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি করছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই প্রতিরোধী অণুজীব প্রাণী থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে। যা ভবিষ্যতে সাধারণ জ্বর কিংবা সামান্য ক্ষত থেকেও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

এই কৃত্রিম এন্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম নিম পাতার উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি প্রাকৃতিক সলিউশন তৈরি করেছেন। এই নির্যাসে আজাদিরাচটিন, নিম্বিডিন, নিম্বোলিনিন, নিম্বিন এবং সালানিন বিদ্যমান। যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসাবে কাজ করে। পাশাপাশি লিম্ফোসাইট বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

গবেষকরা জানান, এই নির্যাস ব্যবহারের ফলে মুরগির খাদ্যকে মাংসে রূপান্তরের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং যকৃৎ কার্যকারিতা উন্নত হয়। এছাড়াও ক্ষুদ্রান্ত্র (ডিউডেনাম ও কোলন) এবং রক্তে এর কোনো ক্ষতিকর উপাদান বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।

চিংড়ির খোলস থেকে চিটোসান : আমাদের চারপাশে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান। এসব অণুজীব খাদ্য, পানীয়, নিঃশ্বাস ও স্পর্শের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে। তবে এন্টিবায়োটিক সহনশীল ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বেশ উদ্বেগ রয়েছে। যেমন মেথিসিলিন ও পেনিসিলিন প্রতিরোধী স্ট্রাফাইলোক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) এবং স্ট্রেপ্টোমাইসিন প্রতিরোধীই কোলি (Escherichia coli)। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো শফিকুল ইসলাম জানান, চিংড়ির খোলস ও বর্জ্য থেকে “চিটোসান ন্যানোকণা” নামে প্রাথমিকভাবে এক ধরনের নতুন এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করেছেন। তবে এর উচ্চতর গবেষণা এখনো চলমান। প্রথমদিকে এই গবেষণা শুরু করেছিলেন ওই বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ড. মো আব্দুল কাফি। গবেষকদের দাবি, এটি ওই সকল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম এবং মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও বেশ কার্যকর।

গবেষক জানান, চিটোসান একটি ধরনের বায়োপলিমার। এটি উৎপাদনের জন্য চিংড়ির খোলস ও বর্জ্য ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ডিমিনারেলাইজেশন, ডিপ্রোটিনাইজেশন ও ডি-অ্যাসেটাইলেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক চিটিনকে চিটোসানে রূপান্তরিত করা হয়। এই ন্যানোকণা শনাক্ত করার জন্য ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কপি (এফটিআইআর), অতিবেগুনি রশ্মি স্পেকট্রোস্কপি, গতিশীল আলো বিচ্ছুরণ (ডিএলএস) প্রযুক্তি এর মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

গবেষক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম আরো জানান, আমরা এটির ন্যানো পর্যায়ে গবেষণা চলমান রেখেছি। এটি শেষ হলে তখন এর ডোস (ব্যবহার মাত্রা) বর্তমানের চেয়ে ১ হাজার গুণ কম লাগবে।-বাসস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here