• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

বাগমারায় মরিচ হলুদের সঙ্গে সংগ্রামী জীবন আব্দুল মালিকের

প্রকাশ: শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫ ৬:৩৭

বাগমারায় মরিচ হলুদের সঙ্গে সংগ্রামী জীবন আব্দুল মালিকের

হেলাল উদ্দীন, বাগমারা : আবদুল মালেক (৪৬) হলুদ ও মরিচ ভাঙানোর কাজ করতেন ১৬ বছর বয়স থেকেই। এলাকার এক ব্যবসায়ীর হলুদ- মরিচ ভাঙানো মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন। এ থেকে যা আয় হতো তা তুলে দিতেন বাবার হাতে। খুব আপন করে নিয়ে ছিলেন এই মেশিনকে। অথচ আপন করে নেওয়া মেশিনের ফিতার সঙ্গে জড়িয়ে ডান হাত হারান তিনি। সে থেকে প্রতিবন্ধী হয়ে যান আবদুল মালেক। তবে ওই চাকরি হারালেও মনোবল হারাননি। দীর্ঘ ২৮ বছর থেকে লাল- হলুদের গুঁড়োর সঙ্গে রয়েছেন। এই থেকেই চলছে সংসার।

উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কসবা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক। হলুদ ও মরিচের গুঁড়ো বিক্রি করে সংসার চালান এই ডান হাত হারানো এই ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী হলেও অন্যের কাছে হাত না পেতে নিজের উপার্জনে চালান সংসার।

আবদুল মালেক নিজের ডান হাত হারানোর গল্প বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে। তিনি জানান, অভাবের সংসারে লেখা পড়া না করে ভবানীগঞ্জ বাজারের তৈয়বুর রহমানের মরিচ, হলুদ ও ময়দা ভাঙানো মিলে শ্রমিকের কাজ নেন। তার উপার্জনের টাকায় সংসার চালানোর সহায়ক হয়। গত ১৯৯৬ সালে হলুদের গুঁড়ো তৈরি করার সময়ে মেশিনের ফিতার সঙ্গে অসাবধানতাবশত ডান হাত জড়িয়ে পড়ে। এতে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো ডানহাত। দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে টানা ২৩ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসেন। সে থেকে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন আবদুল মালেক।
তিনি জানান, এক হাত হারানোর পর হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। হয়ত অন্যের কাছে হাত পাততে অথবা পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে হবে এমনটা ভাবছিলেন। তবে মনোবল শক্ত করেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। এক হাত দিয়েই সংগ্রাম চালিয়ে যেত চান। ঠিক করলেন নিজের উপার্জনেই চলবেন, পরিবারের হাল ধরবেন।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে যৌথ বাহিনী রেড ব্লক অভিযান

কিছু দিন পরে ওই মিলের প্রতি ভালোবাসার টানে একই কাজে অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। তবে আগের মতো আর কাজ করতে পারেন না। বস্তা টানাটানি এবং ওঠানামা করাতে পারেন না এক হাত দিয়ে। হাতের সঙ্গে মুখ ব্যবহার করেও পারেন না ঘুরে দাঁড়াতে। মিল মালিকের চাহিদাও মেটাতে পারেন না। এতে নিজেকে অপরাধী মনে হয় মালেকের। তবে লাল( মরিচ)- হলুদের গুঁড়োর প্রতি ভালোবাসা থেকে যায়।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে অবরুদ্ধ চার সমন্বয়ক

সিদ্ধান্ত নিলেন গুঁড়োকে ধরে রাখবেন তবে মিলে থেকে নয়। মিলের অপারেটরের চাকরিটা ছেড়ে দেন।

সিদ্ধান্ত নিলেন বাজার থেকে কাঁচা মরিচ এবং কিনে তা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বাজারে বিক্রি করবেন। সে সিদ্ধান্ত থেকে নেমে পড়েন হলুদ ও মরিচের গুঁড়ো বিক্রি করতে। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত একই পেশায় আছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে দেখা মেলে প্রতিবন্ধী আবদুল মালেকের। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের পাশে একটি দোকানের সামনে ফুটপাতে হলুদ ও মরিচের লাল গুঁড়ো নিয়ে বসে আছেন। ক্রেতারা আসলে তাঁদের চাহিদা মতো গুঁড়ো সরবরাহ করছেন। কেনাবেচায় বাম হাত ও মুখ ব্যবহার করছেন। ওজন পরিমাপের জন্য ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করতে দেখা যায়৷ পলিথিনে গুঁড়ো ভরার পর মুখ দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে আটকিয়ে দিতে দেখা যায়।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে থাকেন গুঁড়োর পসরা নিয়ে।
তিনি জানান, বিভিন্ন হাট থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করেন। অনুরূপ ভাবে কাঁচা হলুদ কিনে কেটে গরম পানিতে ডুবিয়ে সিদ্ধ করার পর রোদে শুকিয়ে মিলে নিয়ে এসে গুঁড়ো করে বিক্রি করে থাকেন। অনেক সময় রাজশাহীর সাহেব বাজার থেকে শুকনো হলুদ কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে মেশিনে গুঁড়ো করে থাকেন। তাঁর এসব কাজে স্ত্রী সহযোগিতা করেন। এই পেশা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে। এই আয় থেকে ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া করাচ্ছেন। বড় ছেলে এবার ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ছোট মেয়ে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। আবদুল মালেক জানান, তাঁর পুঁজি কম এ কারণে চাহিদা মতো হলুদ মরিচের গুঁড়ো সরবরাহ করতে পারেন না। ছেলে কলেজে ভর্তি হলে খরচ বাড়বে এ নিয়ে চিন্তিত বলে জানান।

আরও পড়ুনঃ  বাঘায় জাতীয় ও স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ওই গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, ছোটকাল থেকে প্রতিবন্ধী আবদুল মালেককে ভবানীগঞ্জে ফুটপাতে বসে হলুদ মরিচের গুঁড়ো বিক্রি করতে দেখছেন। প্রতিবন্ধীরা যে বোঝা না এর দৃষ্টান্ত তিনি।

স্ত্রী ববিতা খাতুন জানান, স্বামী প্রতিবন্ধী হলেও অন্যের কাছে হাত পাতেন না, নিজের আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে। তিনি স্বামীর এই কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এক হাত না থাকার কারণে বিকল্প হিসেবে মুখ ব্যবহার করেন।

সর্বশেষ সংবাদ

এলো মাহে রমজান, হিজরি ১৪৪৬
শনিবার, মার্চ ১, ২০২৫ ৭:১৩
চাঁদ দেখা গেছে, রোজা শুরু রোববার
শনিবার, মার্চ ১, ২০২৫ ৭:১৩
ইইউ’র কমিশনার লাহবিব ঢাকায়
শনিবার, মার্চ ১, ২০২৫ ৭:১৩
 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675