অনলাইন ডেস্ক : নতুন বইয়ে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা বলেছেন, তাঁর উত্তরসূরি চীনের বাইরে জন্ম নেবেন। দালাই লামার এমন ভবিষ্যদ্বাণী চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। কারণ ছয় দশকেরও বেশি সময় আগে তিব্বতে চীনের শাসন থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে তিব্বতিরা চান ৮৯ বছর বয়সী দলাই লামার মৃত্যুর পরও যেন তাঁর ঐতিহ্য বজায় থাকে। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’ নামের বইটিতে দালাই লামা এই প্রসঙ্গেই লিখেছেন।
এর আগে অতীতে দালাই লামা বলেছিলেন—তাঁর উত্তরসূরি তথা পরবর্তী দালাই লামার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে এবারই প্রথম তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁর পরবর্তী পুনর্জন্ম ‘মুক্ত বিশ্বে’ অর্থাৎ চীনের বাইরে হবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী দালাই লামার জন্ম ভারতে হতে পারে বলেও অতীতে তিনি মত দিয়েছিলেন।
দলাই লামা লিখেছেন—পুনর্জন্মের মূল উদ্দেশ্য হলো পূর্বসূরির কাজ চালিয়ে যাওয়া। তাই নতুন দলাই লামার জন্ম মুক্ত বিশ্বে হবে, যাতে দলাই লামার ঐতিহ্যগত কাজ—সর্বজনীন করুণার প্রতীক, তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক নেতা এবং তিব্বতের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি—অব্যাহত থাকে।’
বর্তমান চতুর্দশ দলাই লামা তেনজিন গিয়াতসো ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনের কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর মাত্র ২৩ বছর বয়সে হাজার হাজার তিব্বতীসহ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
চীন দাবি করে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে দলাই লামা বলেছেন, চীনের মনোনীত কোনো উত্তরসূরিকে তিনি স্বীকৃতি দেবেন না।
তবে ১৯৮৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বর্তমান দলাই লামাকে চীন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। গতকাল সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘দলাই লামা হলেন একজন রাজনৈতিক নির্বাসিত ব্যক্তি, যিনি ধর্মের আড়ালে চীনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন। তিব্বত বিষয়ে চীনের অবস্থান সব সময় পরিষ্কার ও অভিন্ন। দলাই লামার বক্তব্য তিব্বতের উন্নতি ও সমৃদ্ধির বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারবে না।’
এর আগে গত মাসে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল—তারা আশা করছে দলাই লামা সঠিক পথে ফিরে আসবেন। তবে শর্ত হিসেবে তিব্বত ও তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্বীকার করতে হবে। এই প্রস্তাব ভারত-ভিত্তিক তিব্বতীয় সংসদ প্রত্যাখ্যান করেছে।
দলাই লামার অনুসারীদের মধ্যে হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গিয়ার এবং মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি রয়েছেন। অনেক অনুসারী দলাই লামার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, তার সাম্প্রতিক হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর। তবে গত ডিসেম্বরে রয়টার্সকে দালাই লামা বলেছিলেন, তিনি ১১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন।
নতুন বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন—এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিব্বতের ভেতর ও বাইরে থাকা তিব্বতীয় জনগণের পক্ষ থেকে প্রচুর অনুরোধ এসেছে, যেন দলাই লামার ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
তিব্বতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয়—একজন উচ্চপদস্থ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা একজন শিশুর মধ্যে পুনর্জন্ম লাভ করে। বর্তমান দলাই লামাকে মাত্র দুই বছর বয়সে ত্রয়োদশ দালাই লামার পুনর্জন্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
নতুন বইয়ে সাত দশক ধরে চীনা নেতাদের সঙ্গে দলাই লামার সম্পর্কের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এটি আজ মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উইলিয়াম মোরো প্রকাশনা সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যে হার্পারকলিন্স থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ভারতসহ অন্যান্য দেশেও এটি হার্পারকলিন্স প্রকাশ করবে।
বইটিতে দালাই লামা লিখেছেন—তাঁর জন্মভূমি এখনো চীনের কমিউনিস্ট শাসনের দমন-পীড়নের মধ্যে রয়েছে এবং তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন তাঁর মৃত্যুর পরও চলবে।
তিনি স্বীকার করেছেন, বয়সের কারণে তিব্বতে তাঁর ফিরে যাওয়ার আশা এখন ক্ষীণ হয়ে আসছে।