আশীর্বাদের বৃষ্টি রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগানে

আশীর্বাদের বৃষ্টি রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগানে

স্টাফ রিপোর্টার: একটি ডাঁটায় অসংখ্য মুকুল আসে। তবে সব মুকুল থেকেই আমের গুটি বাঁধে না। অল্প কিছু গুটি ধরার পর অনেক মুকুল শুকিয়ে কালো হয়ে যায় এবং গুটির সঙ্গেই লেগে থাকে। চাষিরা এই ধরনের মুকুলকে ‘পোড়া মুকুল’ বলে থাকেন। গুটির পাশে যত বেশি পোড়া মুকুল থাকে, আমের গায়ে তত বেশি দাগ পড়ে। রাজশাহী অঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের (২১ মার্চ) বৃষ্টিতে বেশির ভাগ পোড়া মুকুলই ঝরে পড়েছে। তরতাজা হয়ে উঠেছে আমের গুটি।

বৃষ্টি আর মেঘলা আবহাওয়া নিয়ে কোনো কোনো চাষি দুশ্চিন্তা করলেও কৃষি বিভাগ বলছে, এই বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না; বরং বৃষ্টির কারণে আমের গুটি দ্রুত বড় হবে। গুটির ঝরে পড়া থামবে। পাশাপাশি পোড়া মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমের গায়ে দাগ কম হবে। গাছে গাছে ধরবে সতেজ আম। বাজারে দাগমুক্ত আমের দাম থাকে ভালো। আবহাওয়া এ পর্যন্ত আমের অনুকূলে আছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার রাজশাহীতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সে হিসাবে এটি মৃদু তাপপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড কমে যায় ২৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আরও পড়ুনঃ  সিরাজগঞ্জে কারখানায় ডাকাতির এক মাস পর ৫ ডাকাত গ্রেপ্তার

বৃহস্পতিবার বেলা ২টার পর রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। রাজশাহী ছাড়াও আম উৎপাদনকারী অন্য তিন জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে চাষিদের কেউ খুশি, কেউ আবার দুশ্চিন্তা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের আমচাষি ইসমাইল খান বলেন, ‘বৃষ্টির পর আজ বাগানে এসেছি। এসেই মনটা ভরে গেছে। এক দিনের টিপ টিপ বৃষ্টিতেই মনে হচ্ছে, গুটি অনেকখানি বড় হয়ে গেছে। এই গুটির এখন ঝরে পড়া কমবে। বৃষ্টির কারণে ডাঁটার বেশির ভাগ পোড়া মুকুল ঝরে গেছে। মটরদানা কিংবা মার্বেলের আকারের গুটিগুলো এখন ঝকঝক করছে। গুটির পাশে পোড়া মুকুল থাকলে আমের গায়ে দাগ হয়। আমটা সতেজ হয় না। কিন্তু পোড়া মুকুল সরানোও যায় না। বৃষ্টি-বাতাসে প্রাকৃতিকভাবেই ঝরে পড়ে।’

আরও পড়ুনঃ  নাটোর আদালতের মালখানায় চুরির ঘটনায় আকাশ-বাতাসসহ গ্রেপ্তার ৮

ইসমাইল খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালোই আছে। বৃষ্টির পর গাছ এবং আমের গুটি ঝকঝকে-তকতকে হয়ে গেছে। গুটিগুলোতে নতুন করে প্রাণ এসেছে। এখন ভয়ের বিষয় একটাই—শিলাবৃষ্টি। এটা না হলেই হয়। এটা না হলে যেমন গুটি এসেছে, তাতে ভালো ফলন হবে।’

তবে বৃষ্টি নিয়ে কিছুটা শঙ্কার মধ্যে আছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে গেছে। আকাশও মেঘলা। হালকা বৃষ্টির কারণে গুটিতে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। ঝুম বৃষ্টি হলে এটা হতো না। এ জন্য রোদ উঠলেই আমি গাছে একটা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে গুটিটা ধুয়ে নেব।’

বৃষ্টির পর একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই বৃষ্টি আমের জন্য ভালো হয়েছে। এখন আমের বোঁটায় পানি পড়েছে বলে তা শক্ত হবে। গুটির পাশে যে পরিত্যক্ত পোড়া মুকুল থাকে, সেগুলোও ঝরে পড়বে। আমের ডাঁটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্রুত আম বড় হবে। তবে বৃষ্টির পর একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে নিতে হবে। তাহলে ভালো হবে।’

আরও পড়ুনঃ  তরুণীকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল : আপন কফি হাউজের তিনজন পুলিশ হেফাজতে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর আমের ফলন ছিল কম। তাই এবার বেশি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চলতি মৌসুমে নওগাঁর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন এবং রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে ২ লাখ ৬০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাগানের অর্ধেকেরও বেশি আমের মুকুল এখন গুটিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬৫ শতাংশ মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির আকারে পৌঁছেছে। আর ৩৫ শতাংশ গুটি মার্বেলের আকার পেয়েছে। বৃষ্টির পর এখন গুটির বৃদ্ধি দ্রুত হবে বলে তিনিও মনে করছেন।’

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *