অনলাইন ডেস্ক : নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গতকাল সোমবার নিজের জেলা পঞ্চগড় সফর করে সাড়া ফেলেছেন সারজিস আলম। ঢাকা থেকে ফ্লাইটে করে সৈয়দপুরে নেমে বাড়ি যাওয়ার পথে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে শোডাউন করে তোপের মুখে পড়েছেন নয়া বন্দোবস্তের স্লোগান দেওয়া সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। রাজনৈতিক দলের নেতারা তো বটেই, খোদ নিজের দলের ভেতর থেকেই সমালোচনা হচ্ছে।
গত মাসে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হয়েছেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর ছেলে সারজিস আলম। গতকাল ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। সেখানে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা অপেক্ষা করছিলেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
পথে দেবীগঞ্জ উপজেলা শহর সংলগ্ন করতোয়া নদীর ওপর চতুর্থ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে শতাধিক গাড়িবহরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা টোল দেন সারজিস। সেতুর টোল আদায়কারী বাবু জানান, ১৩৫টি গাড়ির জন্য সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকা টোল পরিশোধ করা হয়েছে।
সারজিস আলমের আগমন উপলক্ষে গত দুদিন ধরে পঞ্চগড় জেলা শহর ছাড়াও অন্য উপজেলাগুলোতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এসব পোস্টারে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় সারজিস আলমকে পঞ্চগড়বাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এনসিপির পক্ষ থেকে সারজিস আলম পঞ্চগড়বাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন-এমন পোস্টারও লাগানো হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারজিস আলমের এই গাড়িবহরের শোডাউনকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন (নির্বাচনী প্রচারাভিযান) করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।’ আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
সারজিসের সহযোদ্ধা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা শতাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে পঞ্চগড়ে শোডাউন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আজ মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সারজিসের কাছে জানতে চান, এ ব্যয়বহুল শোডাউনের অর্থায়ন এল কোথা থেকে।
ওই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘প্রিয় সারজিস, আমি এই চিঠিটি লিখছি আমাদের দলের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, দলের নীতিগত অবস্থান ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকে। সম্প্রতি তোমার নিজ জেলায় শতাধিক গাড়ির একটি বড় বহর নিয়ে প্রবেশ করায় জনগণের মনে যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তুমি (সারজিস) কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে বলেছিলে, আমার আসলে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নাই। ধার করে চলতেছি। এইটাই হচ্ছে রিয়েলিটি। আমার পকেটে মানিব্যাগও নেই। তোমার এই সাদাসিধে জীবনযাত্রার কথা আমাদের অভিভূত করেছিল এবং জনগণের কাছে আমাদের সংগ্রামকে আরও গ্রহণযোগ্য করেছে।
তাসনিম জারা আরও লেখেন, ‘কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটে এত বড় একটি আয়োজন কীভাবে সম্ভব হলো—এর অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা কীভাবে হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। আমাদের দল স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে জায়গা থেকে এসব প্রশ্নের স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উত্তর দেওয়া আমাদের সবারই দায়িত্ব।’
সারজিসও এই চিঠির জবাব দিয়েছেন ফেসবুকেই। শোডাউনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা লিখেছেন, ‘ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করার জনবল এবং সামর্থ্য আপনার যদি না থাকে কিংবা আপনি দেখাতে না পারেন, তাহলে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। অন্য নেতা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণও আপনাকে গোনায় ধরবে না। কারণ, মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতামুখী।’
সারজিস দাবি করেছেন, তাঁর এই মুহূর্তে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকলেও তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সেই সামর্থ্য আছে। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং জেলার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্ধেকের বেশি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। যেগুলোর ব্যয় আমাদের বহন করতে হয়নি। বাকি প্রায় ৫০টার মতো গাড়ির ৬০০০ করে যে তিন লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে, সে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের আরও ৫০ বছর আগেও ছিল। এবং আমি বিশ্বাস করি অন্য কেউ না; শুধু আমার দাদা আমার জন্য যতটুকু রেখে গিয়েছেন, সেটা দিয়ে আমি আমার ইলেকশনও করে ফেলতে পারব ইনশা আল্লাহ।’-আজকের পত্রিকা