Home জাতীয় আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

অনলাইন ডেস্ক : পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বায়ু দূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।

তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরো জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার ভোরে কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচও দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন।

ঢাকাস্থ তার সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ু দূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ু দূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচও’র অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে যায়। তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ু বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরো জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ‘ক্লিন এয়ার প্রকল্প’ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এই প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী, আইন প্রয়োগ জোরদার, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটা মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।

বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরো শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে ইতোমধ্যে বায়ু মানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতসমূহের আধুনিকায়ন জরুরি বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী কারণ আমি বিশ্বাস করি, এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার। বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি,পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।-বাসস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here