• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

শহীদ কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী

প্রকাশ: রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩ ৯:১৭

শহীদ কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কজন ক্ষণজন্মা মানুষ স্বীয় প্রতিভা ও কর্মগুণে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং বাঙালি জনজীবনে নিজের আসন পাকাপোক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান (১৯২৩-১৯৭৫) একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। সোমবার (২৬ জুন) তাঁর জন্মশতবার্ষিকী।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে। ওই সময় মুজিবনগর সরকার গঠন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হননি এবং তিনি সর্বদাই জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেছেন।

এই মহান ব্যক্তিত্ব ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নাটোর মহকুমার বাগাতিপাড়া থানার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তাঁর দাদা গুলাই এর জমিদার হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার (১৮৪৮-১৯৩৬) ব্রিটিশ আমলে একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। কামারুজ্জামানের পিতা আবদুল হামিদ মিয়া (১৮৮৭-১৯৭৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক। তিনি রাজশাহীতে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন।

এই পিতার গর্বিত ও বিশ্বনন্দিত সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামানও দাদা এবং পিতার আদর্শকে সামনে রেখে শৈশবেই সেই অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পিতা আবদুল হামিদ মিয়া ও মাতা জেবুন নেসার ১২জন ছেলেমেয়ের মধ্যে কামারুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান। তাঁর জন্মের সময়ে দাদা হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার ছিলেন কলকাতায়। তিনি রাজশাহী এসে পৌত্রের আকিকার ব্যবস্থা করেন। পৌত্রের তিনি নামকরণ করেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম দিলেন দাদি ‘হেনা’। হাসনা-হেনা ফুলের গন্ধ ও সৌরভে বংশের সুনাম বৃদ্ধি করবে এই হেনা আদরের পৌত্র; এই ছিল দাদির ঐকান্তিক প্রার্থনা। দাদির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। যে বংশে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনার মতো বিশ্বনন্দিত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন সেই বংশের মর্যাদা ও সুনাম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কামারুজ্জামান হেনার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় বাড়িতেই পিতৃব্য বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজসেবক কবি মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ সাহেবের কাছে। তারপর তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তাঁর এক ফুফা। হঠাৎ করেই তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে বদলি হয়ে যান। ফলে কামারুজ্জামান হেনাকেও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যান। কামারুজ্জামান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ল’ পাশ করেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা শাখার সম্পাদক এবং ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানার চামরুল গ্রামের জোতদার আশরাফ উদ্দীন তালুকদারের কন্যা জাহানারা বেগমকে বিবাহ করেন।

আরও পড়ুনঃ  দেশের প্রথম শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দাবি ভাষাসৈনিক আখুঞ্জির

১৯৫৬ সালে কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে তিনি দুবার মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৭ তিনি সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন। আইয়ুব খান সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির সমর্থনে ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুনরায় তিনি রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে সারা দেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। এমন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫জন সদস্য বিশিষ্ট দলীয় হাই কমান্ড গঠন করেন। এই হাই কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন কামারুজ্জামান।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সরকার নিরীহ-নীরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়, যা ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এই কুখ্যাত গণহত্যার সময় পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এর পূর্বেই তার দলের নেতা কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছিলেন। তাই তিনি শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ ও আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বগুড়া হয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে তার সাথে তাজউদ্দিন আহমদ সহ অন্যান্য নেতাকর্মীর দেখা হয়। ওখানে তারা সকলে মিলে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। আর সবার সিদ্ধান্তে ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল গঠিত হয় প্রথম অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার এবং ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা বৈদ্যনাথ তলায় (পরবর্তীতে মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ  সিরাজগঞ্জে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

নবগঠিত মুজিবনগর সরকারে কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কামারুজ্জামান ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে তিনি মুক্তাঞ্চল, শরণার্থী শিবির ও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রীবর্গসহ স্বাধীন দেশে ফেরত আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে এলে সরকার পুনর্গঠিত হয়। সেই পুনর্গঠিত সরকারে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কামারুজ্জামান। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি রাজশাহীর দু’টি সদর গোদাগাড়ি ও তানোর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করলে তিনি বাকশালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা করে ঘাতকরা। ঐ সময় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে কামারুজ্জামান সহ আরো জাতীয় তিন নেতাকে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ব্যক্তি জীবনে শহীদ কামারুজ্জামান ছয় সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানগণ হলেন ফেরদৌস মমতাজ পলি (১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমি (১৯৫৭), এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (১৯৫৯), এএইচএম এহসানুজ্জামান স্বপন (১৯৬১) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (১৯৬৪)। তাঁর বড় পুত্র অ্যাডভোকেট এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনও পিতার মতই রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। খায়রুজ্জামান লিটন বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পুনঃনির্বাচিত মেয়র। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্রবধূ শাহীন আকতার রেণী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং দৌহিত্র ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ কথা স্বীকার্য যে, চারপুরুষ রাজনীতিতে এমন পরিবার বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।

বিভিন্ন কর্মসূচি:

জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২৬ জুন) রাজশাহীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় জননেতা এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন এঁর নিজ বাসভবনে কোরআন খতম, সকাল ১১টায় কাদিরগঞ্জস্থ শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়া, দুপুর ১২টায় শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্বরে মানবভোজ বিতরণ, যোহর ওয়াক্তের নামাজ শেষে মহানগরীর সকল মসজিদে দোয়া, বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লালন শাহ্ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ ১২:০৮
১০৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রত্যাহার
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ ১২:০৮
নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় বাংলাদেশের
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ ১২:০৮
 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675