মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

নাটোরে বিএনপির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, উত্তেজনা

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ । পরে বিএনপি এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করলেও প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু বক্তব্য শুরুর আগেই শেষ হয় বিএনপির সমাবেশ।

নাটোরে শনিবার (২৭ মে) সকালে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এদিকে সমাবেশ শুরুর পর বাঁশ হাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘নিরাপত্তার অভাবে’ তড়িঘড়ি সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। এর আগে বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগে এদিন সকাল সোয়া সাতটার দিকে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই ককটেল দুটি উদ্ধার করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে একটা কাঠের চৌকি রেখে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন। এরপর সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী, যুবদল নেতা এ হাই তালুকদার প্রমুখ।

এর মধ্যে পৌনে আটটার দিকে শহরের দিক থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ ও সম্পাদক শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বিএনপির সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। তবে পুলিশ সড়কে মানবঢাল তৈরি করে বিদ্যুৎ অফিসের মোড়ে তাদের আটকে দেয়। ছাত্রলীগের নেতারা সেখানে দাঁড়িয়েই অবিরাম স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই তখন বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের মানবঢাল ভাঙার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। আটটার কিছু পর পরই ছাত্রলীগের নেতারা দুই বস্তা সবুজ রঙের বাঁশের লাঠি নিয়ে সেখানে হাজির হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁরা প্রত্যেকে বাঁশ হাতে বিএনপির সমাবেশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁরা ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা পাথর ছুড়তে শুরু করে। এ সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পাথর ছোড়া বন্ধ হয়।

তবে বৃষ্টির মধ্যেই উভয় দলের নেতারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিচ্ছিলেন। এদিকে সকাল সাড়ে আটটায় সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু সেখানে উপস্থিত হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশকে ঠেলে জোর করে বিএনপির সমাবেশের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। ‘পুলিশের অনুরোধে’ বিএনপি তাৎক্ষণিক সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি নেতা-কর্মীর জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির ডাকা সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল আটটায়। কিন্তু সাতটা বাজার আগেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আলাইপুরে বিএনপি কার্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। তবে কারও মুখেই স্লোগান ছিল না। ব্যাপক পুলিশ পাহারার মধ্যেই তাঁরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন।

ভেতর থেকে মাঝে মধ্যে স্লোগানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। ঠিক একই সময় বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এসময় বাধা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আধা ঘন্টা পর সেখান থেকে চলে যায়।

নাটোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্ছুর দাবি, প্রতিপক্ষরা সমাবেশ পণ্ড করতেই সকালে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটায় এবং দুটি ককটেল ফেলে রেখে যায়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার অভাব দেখা দেওয়ায় তাঁরা প্রধান অতিথিকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে পারেননি। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমাদের কেউ সেখানে ককটেল রেখে আসেনি। বিএনপি কর্মীরাই সন্ত্রাস করার উদ্দেশ্যে ককটেল জমা করে রেখেছিল।’

অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিয়ে মিছিলসহকারে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে তাঁরা শান্তি সমাবেশ করেন। এতে দলের সহ-সভাপতি এ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, মহিলা আ.লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ, নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, জেলা আ,লীগের যুগ্ন সম্পাদক সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু, এ্যাডঃ মালেক শেখসহ ছাত্র-লীগ,যুব-লীগ মহিলা আ,লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

এব্যাপারে নাটোর সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ধরণের সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
উভয় দলের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত এড়াতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়ন আছে বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান (পিপিএমবার)

সর্বাধিক পঠিত