বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

তাহের হত্যার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর 

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে একই মঞ্চে দুই আসামিকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়।
এ দুই আসামি হলেন- ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। গত ১৭ বছর ধরে এ দুই আসামি এই কারাগারেই বন্দী ছিলেন। এদের মধ্যে ড. মহিউদ্দিন ছিলেন ড. তাহেরের সহকর্মী। কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় এই সহযোগী অধ্যাপকের পদোন্নতিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন অধ্যাপক তাহের। এ কারণে ড. মহিউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সোহরাব হোসেন কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইলে জাহাঙ্গীরের ফাঁসির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের দাফন আগামীকাল বাদ জুম্মা সম্পন্ন করতে চাচ্ছি। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে আজ রাতের ভেতরেই জানাজা শেষে দাফন করতে হবে।
দুই আসামির রায় কার্যকর নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মী এবং উৎসব মানুষও। এ অবস্থায় রাত ৯টা ১৪ মিনিটে কারাগারের পেছনে দক্ষিণ দিকের ফটক দিয়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি বহর ভেতরে ঢোকে
গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর ও  মহিউদ্দিনের স্বজনদের শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের একটি চিঠি দেয়। এই চিঠি বাড়ি নিয়ে গিয়ে খুলতে বলা হয়। চিঠিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ ও সময় লেখা ছিল। সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর রায় কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড ও কার্যকর করতে আগেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় আটজন জল্লাদকে। কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১৫ দিন আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। মৃত্যুকূপটি দীর্ঘদিনের পুরেনো বলে কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের পাশে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চটি সংস্কার করা হয়।  এছাড়াও যে দঁড়িতে ঝুলানো হয়, তাতে আসামিদের তিনগুন ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফাঁসির দঁড়িটিও চূড়ান্ত করা হয়।
প্রথমে ১৭ জন কয়েদিকে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আটজনকে চূড়ান্ত করে। এরা হলেন- আলমগীর, নাজমুল, সুমন, উজ্জ্বল, নাসির, মজনু, আশরাফুল ও রিয়াজুল। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীর। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। আলমগীর এর আগেও জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। জল্লাদ দলের দুইজন নতুন সদস্য ছিলেন। এরা হলেন- রিয়াজুল ও উজ্জ্বল। উজ্জ্বল পুঠিয়ার আলোচিত মহিমা ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়ানো হয়।
রাত ৯টায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তাদের গোসল করিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পরে কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম তাদের তওবা পড়ান। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন জল্লাদ দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। দুজনকে একই মঞ্চে তোলার  পর দুইজন জল্লাদ তাদের কালো কাপড়ের জমটুপি ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দেন। রাত ১০টা ১ মিনিটেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আট জল্লাদের মধ্যে টিম প্রধান হাতল টেনে ফাঁসি কার্যকর করেন।
জানা গেছে, ফাঁসি কার্যকরের সময় রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন, জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব, সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল, কারাগারের জেলার নাজিম উদ্দিন, রাজশাহী কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. মো. জুবায়ের আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, রাতেই জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হবে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উপজেলায়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।

সর্বাধিক পঠিত

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com