স্টাফ রিপোর্টার: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের নদ-নদী, নালা, খাল-বিল রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে অগ্রগামী আর কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রীই দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় কাজ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্প ও রাজশাহী বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটি ‘আত্রাই, ইছামতি, বড়াল, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর সমীক্ষা’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে।
১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা প্রথম নদ-নদীগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে কর্মশালায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের দেশে নদী নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই ছিল না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নদীর নাব্যতা কমে গেছে, ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুই ১৯৭৪ সালে নদীর নাব্যতা বাড়াতে আটটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই সংখ্যাটা ৯-এ পৌঁছায়নি। আর এখন আমাদের ড্রেজার সংখ্যা ৮০টি। এগুলো দৃশ্যমান না, তাই এ ধরনের উন্নয়নগুলো কেউ দেখতে পায় না।
নদ-নদীগুলো মানবদেহের শিরা-উপশিরার মতো উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একজন মানুষকে সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকতে হলে যেমন শিরা-উপশিরায় রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন, তেমনি একটি দেশের বাঁচার জন্য দূষণমুক্ত ও নাব্য নদ-নদী দরকার। নদীকে রক্ষা করতে না পারলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ তাই আমাদের দেশের নদ-নদী, নালা, খাল-বিল রক্ষা করতে হবে। এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
নদীগুলোকে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীগুলোকে রক্ষা করতে নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে। আমরা চাই নদী রক্ষায় সবাই এগিয়ে আসুক। এ জন্য জনসচেতনতা দরকার। এখন খননের কারণে আমরা নদীগুলোতে নাব্যতা পাচ্ছি, প্রচুর মাছও পাচ্ছি।
আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিলসহ অন্যান্য জলাভূমির সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীমাতৃক দেশকে বাঁচাতে হবে, নদীর জায়গা নদীকে ছেড়ে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই নদীগুলো আমাদের গেরিলাযুদ্ধের অংশ ছিল। নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণেই আমরা পাকিস্তানী বাহিনীকে সহজে যুদ্ধে পরাজিত করতে পেরেছিলাম। এ সময় তিনি বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
কর্মশালার শুরুতে ৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্পের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ স্পেশালিস্ট মনির হোসেন চৌধুরী দেশের নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীতে তুলে ধরেন। পরে তিনি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে আত্রাই, ইছামতি, বড়াল, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর উৎপত্তি ও পতিতস্থল, দৈর্ঘ্য, গতিপথ, তীরবর্তী স্থাপনা, দূষণ উৎস, ভাঙন সংখ্যা ও পরিমাণ, নাব্যতার ধরন, নদীগুলোর সঙ্গে সংযোগনদী, উপনদী, শাখানদী, খাল ও বিলের তথ্য এবং নদী রক্ষায় করণীয় উপস্থাপন করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জিএসএম জাফরউল্লাহ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন, রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, ৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ইকরামুল হক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।
কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থার প্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।