স্টাফ রিপোর্টার: সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরে গত শুক্রবার ফার্নিচারের কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত ৯ জনের মধ্যে সাতজনের বাড়ি রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে। অন্য দুজনের বাড়ি ঢাকা ও মাদারিপুরে। রাজশাহী বিভাগের সাতজনের মধ্যে চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে। নিহতদের পরিবারগুলো এখন এই শ্রমিকদের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন।
রাজশাহীতে যে চার শ্রমিকের বাড়ি তারা হলেন- বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মো. জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুরি কাতিলা গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার ও বারইহাটি গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন এবং একই গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের ছেলে মো. আরিফ। নিহত রুবেল নিহত আরিফের চাচা।
শনিবার বিকালে নিহত ফিরুজ আলী সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা বিলাপ করছেন। ফিরুজের বাবা আনিসুর রহমান সরদারও কাঁদছেন। ফিরুজের স্ত্রী হোসনে আরা এবং তার ৭ ও ৪ বছর বয়সী দুই ছেলেকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
আনিসুর রহমান সরদার জানান, ফিরোজ নামের এলাকার আরও একজন শ্রমিক সৌদিতে থাকেন। তিনিই প্রথম শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর জানান। সেখান থেকে নিয়মিত খবরাখবর দিচ্ছেন। তবে গ্রামে বাড়িতে এসে প্রশাসনের কেউ যোগাযোগ করেননি। আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার তো এখন আর চাওয়ার কিছু নাই। শুধু লাশটাই চাই।’
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আনিসুর রহমানের দুই ছেলে। এরমধ্যে ফিরুজ থাকতেন সৌদিতে। তার ছোট ভাই ফারুক সিঙ্গাপুরে থাকে। এখন এলাকাবাসী হিসেবে আমাদের একটাই দাবি, লাশটা যেন দ্রুত আসে।’
বাগমারার নিহত অন্য তিন শ্রমিক সাজেদুল ইসলাম, রুবেল ও আরিফের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। দুপুরে নিহত শ্রমিক আরিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা শাহাদাত হোসাইন বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল করিম সরকার জানান, রুবেল প্রায় এক যুগ ধরে সৌদিতে থাকতেন। বছর তিনেক আগে চাচার সঙ্গে তার ভাতিজা আরিফও সৌদি যান। রুবেল বিবাহিত। ৫ বছরের একটি ছেলে আছে। তবে আরিফ অবিবাহিত ছিলেন। ইউপি সদস্য বলেন, ‘লাশগুলো যেন দ্রুত আসে, আর পরিবারগুলো যেন ক্ষতিপূরণ পায়। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি। আমাদের এখন এটাই চাওয়া।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘বাগমারার এসি ল্যান্ডকে আমি নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। সন্ধ্যার পরে (শনিবার) আমিও যাব। সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। যত দ্রুত সম্ভব মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে তারা তৎপর আছেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।’
শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করার কোন সুযোগ নেই। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয় এবং সৌদি দূতাবাস নিশ্চয় বিষয়টি দেখবে। শ্রম আইন অনুযায়ী পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।’