স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে এখন স্থানীয়ভাবেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। শহরের ৭০টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮টিতেই ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় এডিস মশার বিরুদ্ধে ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মহানগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টিএন্ডটি কলোনী এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতার বিশেষ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু। ১৫ দিনের এই অভিযানে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ড্রেন পরিস্কার, লার্ভিসাইড দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এডিস মশার বিরুদ্ধে নামা এ ‘যুদ্ধে’ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রায় ১ হাজার ৩০০ কর্মী এই কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সকলকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে। এলক্ষ্যে মহানগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে একাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে এ অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিশেষ অভিযান শেষে রাসিকের নিয়মিত অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। এসব বিষয়ে কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করা হবে। সভায় ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার রোধ, ঝোপঝাঁড় জঙ্গল পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেয়া হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে নামাজের পূর্বে ইমামগণকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে বক্তব্য রাখার অনুরোধ জানানো হয়। রাজশাহী সিটির পুনরায় নির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশনায় রাজশাহী মহানগরীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকে সচেতন করতে স্বাস্থ্যকর্মীরারা এ সংক্রান্ত লিফলেট বাড়ি বাড়ি পৌছে দিচ্ছেন। পাড়া মহল্লায় মাইকিং করা হচ্ছে, ফুলের টব, ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, টিনের কোঁটা, ভাঙ্গা কলস, ড্রাম, ডাব-নারিকেলের খোসা, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটারের তলায় পানি জমতে দেবেন না। যেসব স্থানে মশা জন্মাতে পারে সেসব স্থানে পানি জমতে দেবেন না। বাড়ীর ভেতরে, আশ-পাশ ও আঙ্গিনা পরিস্কার করুন। দিনে ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করুন। ডাব-নারিকেলের খোসা, ভাঙ্গা কলস, টিনের কৌটা ব্যবহারের পর জমিয়ে না রেখে মাটিতে পুঁতে রাখুন।
এ সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন, তৌহিদুল হক সুমন, সচিব মো. মশিউর রহমান, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু, জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু, মশক কর্মকর্তা (মনিটরিং) জুবায়ের হোসেন মুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছে। প্রথমদিকে রোগীদের সবাই ছিলেন ঢাকা ফেরত। তবে এখন স্থানীয়ভাবেও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার সকালে হাসপাতালে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ জানান, ভর্তি থাকা ২৪ রোগীর মধ্যে ছয়জন স্থানীয়ভাবেই আক্রান্ত। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একজন মারা গেছেন। সোমবার সকাল ৮টার আগে হাসপাতাল থেকে ছয়জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। ভর্তিও হয়েছেন ছয়জন।