স্টাফ রিপোর্টার : যেকোনো গণপরিবহনের তুলনায় সবচেয়ে নিরাপদ ট্রেন। নিরাপদের কারণে বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ ট্রেন ভ্রমণ। কিন্তু এখন ট্রেনের যাত্রীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পাথর নিক্ষেপ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। রেল কর্তৃপক্ষ পাথর নিক্ষেপ ও ছিনতাইরোধে কাজ করলেও সহসাই রোধ করা যাচ্ছে না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ট্রেনের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ফলে দরজা জানালা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাথরের আঘাতে যাত্রীদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে।
পশ্চিমাঞ্চলে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে ১৫টি পয়েন্টে। এসব পয়েন্ট হচ্ছে, নাটোরের আব্দুলপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিরাজগঞ্জের সলপ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিরাজগঞ্জের জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পাবনা জেলার বড়ালব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পাবনার ভাঙুড়া, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড় জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া, বগুড়ার ভেলুরপাড়া, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ও খুলনার ফুলতলা স্টেশন এলাকা। এছাড়াও নতুন করে যোগ হয়েছে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ।
রাজশাহী রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী থেকে প্রতিদিন ১৫টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে পাথর নিক্ষেপ ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে ঢাকার ট্রেনগুলো। এছাড়াও খুলনাগামী দুটি, নীলফামারী ও পঞ্চগড়গামী তিনটি ট্রেন ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জগামী দুটি ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, গত এক বছরে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন যাত্রীরা। আহতরা কোনও চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
আন্তঃনগর ট্রেনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিয়মিত যাত্রীরা জানান, এমন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে। এতে যাত্রীরা যেমন আহত হচ্ছেন, তেমনি ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙে রেলওয়ে বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
রাজশাহী রেলস্টেশনের ম্যানেজার আবদুল করিম বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না তারা। প্রতিটি ট্রেনে একজন করে চিকিৎসক রাখাও যাচ্ছে না। যারা আহত হচ্ছেন তাদের রেলওয়ের হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল নাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ এর মধ্যে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী থেকে ঢালারচরগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের দুইদিক থেকেই পাঁচটি বগি লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিটের দিকে এই ট্রেন পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া স্টেশন থেকে সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্ধ স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এলে মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে সাত-আটজন যাত্রী আহত হন।
ঢালারচর ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্ট একরাম হোসেন জানান, সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা অংশে ট্রেন ঢোকার পরেই পাথরের ভয়ে থাকতে হয়। ১২ তারিখ তার গায়েও পাথর লেগেছে। এতে তিনি ভাগ্যের জোরে বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন বলে মনে করেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পাথর যারা ছোড়ে, তাদের চিহ্নিত করা ও শাস্তি দেয়া কঠিন। এর আগে আমরা কয়েকবার পাথর ছোড়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরেছিলাম। কিন্তু এদের প্রায় সবাই ছিল কিশোর বয়সী। কম বয়সী হওয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া কঠিন হয়ে যায়। সামাজিক সচেতনতা ছাড়া এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যথাযথ আইন প্রয়োগের ওপর জোর দেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। তিনি বলেন, পাথর নিক্ষেপকারীদের অধিকাংশ কিশোর ও তরুণ। বর্তমানে প্রতিটি ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশের ৫ জন সদস্য যাত্রীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। গত কয়েক বছরে জিআরপি পুলিশ ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৩০টির বেশি মামলা দায়ের করেছে। কিছু আসামি ধরাও পড়েছে। এছাড়া পুলিশ, রেলওয়ে কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন।