কেমন হওয়া উচিত তরুন প্রজন্মের ক্যারিয়ার ভাবনা
মো: নেয়ামুল ইসলাম
১৮ আগস্ট ২০২৩
মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য তার ক্যারিয়ার। একটা ক্যারিয়ারের পেছনে মানুষ তার পুরো জীবন ব্যয় করে। দিনদিন প্রযুক্তির কারণে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। এতে অনেকের কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে, অনেকের আবার নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে কেউ চাকরি হারাচ্ছে, আবার কেউ এগিয়ে যাচ্ছে দারুণ গতিতে। ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ হারিয়ে ফেলছে তার জীবনের একটা বড় অংশ। সঠিক ক্যারিয়ার গড়ে নেয়ার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। এইসব পরিকল্পনার পথে এগোলে মানুষ সফলতা লাভ করবে। এর মূলে রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ শেষ করে ফেলা। কাজ জমিয়ে রাখলে তা বাড়তে থাকে, ফলে এক সময় মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। ফলে মানুষ পিছিয়ে যায়, ক্যারিয়ারে ব্যর্থতার মুখ দেখে, বেকারত্ব বাড়তে থাকে।
আজকাল অনেকেই পড়াশোনা শেষ করলেও তার মাঝে কোনো দক্ষতার সৃষ্টি হচ্ছে না। অর্থাৎ বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে আজকাল শুধু একাডেমিক সনদপত্রের উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করছে, ফলে তারা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে নিজেদের বিভিন্ন দিকে দক্ষকরে গড়ে তুলতে পারছে না। বর্তমান সময়ে নতুন একটা ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ তরুণ ই সরকারি চাকরি অথবা বিসিএসকে একমাত্র লক্ষ হিসেবে বিবেচিত করছে, বিসিএসক্যাডার হওয়া ক্যারিয়ার গঠনের অনেক অপশনের মধ্যে একটি, অবশ্যই ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত। তার মানে এইনয় যে, ক্যাডার হতেই হবে বা এটাই একমাত্র লক্ষ্য।
কোন এক সময়ে চাকরির বাজার খারাপ হয়ে যাওয়ায় চীনের সাধারণ পড়াশোনাকে কম গুরুত্ব দিয়ে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এরকম ভাবে যদি মধ্য আয়ের দেশগুলোয় কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো তাহলে দক্ষ একটা জনগোষ্ঠী গড়েতোলা সম্ভব হতো। সচেতন ছাত্র মাত্রই তার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে থাকে।
বর্তমানে জনসংখ্যা বেড়েছে বেশ, সেই তুলনায় কাজের পরিধি বাড়েনি। কিন্তু দক্ষ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে জনসংখ্যাকে বোঝা নয়, বরংমানবসম্পদ হিসেবে গড়েতোলা যাবে। এজন্য চিরাচরিত একাডেমিক ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আধুনিক যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে। নিজেদের প্রযুক্তির সাথে আপডেট করতে হবে। জীবনে কিছু অর্জন করতে চাইলে তার সামনে এক স্বপ্নের প্রয়োজন। মানুষ সেই স্বপ্নের পিছু ছোটে। আর এই স্বপ্ন পূরণের পথে চলতে আপনাকে অন্যসবার থেকে এগিয়ে থাকতে হবে৷ বর্তমান পৃথিবী প্রতিযোগিতার সময়। এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন দিকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷ লিডারশীপ, কমিউনিকেশন, নিগোসিয়েশন, ব্রান্ডিং ইত্যাদি দক্ষতা অর্জনতো অবশ্য পালনীয়। শিক্ষার্থীদের সঠিক ক্যারিয়ার সিদ্ধান্ত ও তার পেছনে সঠিক স্ট্র্যাটেজি বা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেভাবে আগাতে হবে। শিক্ষাজীবনের শেষ দিকে এসে নিজের গোছানো ক্যারিয়ারের পথে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘A good plan is half-done.’ অর্থাৎ সুন্দর একটি পরিকল্পনা করতে পারলে তা অর্জনের পথে অর্ধেক এগিয়ে যাওয়া যায়। কথাটি ঠিক তাই। আর এ কথা ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের ক্ষেত্রেও অধিক বেশি প্রযোজ্য।
তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো কখনো করা উচিত নয়
পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক না থাকা :- আইসোলেটেড মানুষের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন কাজ। যাদের সবার সাথে সুসম্পর্ক থাকে, বাচনভঙ্গিতে এগিয়ে থাকে, স্বাভাবিক ভাবেই তারা আলাদা সুবিধা লাভকরে। তাই তরুণদের নেটওয়ার্কিং করতে হবে।
পছন্দের চাকরি :- চাকরির ব্যাপারে আকাশ পাতাল পার্থক্য রাখা যাবে না৷ কাজকে কাজ মনেকরে পরিশ্রম করতে হবে। সময়বলে, যারা বেশি বেছে কাজকরে তারা কম সফলতা পায়।
নতুন কিছু শিখতে না চাওয়া :- অনেকেই পড়াশোনা শেষকরে নিজের শেখার চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দেয়। অথচ যতদিন অপনি মাঠে থাকবেন, আপনাকে ক্রমাগত শিখতে হবে। শেখার কোনো শেষ নেই। যতবেশি শিখবেন। ততই অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবেন।
সঞ্চয় :- আর্থিক সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো সময়ে যতটা সম্ভব সঞ্চয় করতে হবে। খারাপ সময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ব্যাকআপ থাকলে মানুষ যেকোনো খারাপ সময় পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে পারিদিতে পারে।
সর্বশেষে একটা কথা বলি, লক্ষ্যহীন নৌকা কখনো জীবনের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। জীবনের মোড়ে মোড়ে আপনার লক্ষ্য পরিবর্তন হতেই পারে, কিন্তু তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নাই, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ভাবনা ভাবা দরকার ছাত্রজীবন থেকেই। ক্যারিয়ার ভাবনায় শতভাগ সফল হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনি যখন একটি লক্ষ্যনিয়ে এগিয়ে যাবেন, আপনার উদ্দেশ্যই থাকবে সফল হওয়া আর এই সফল হওয়ার প্রবল ইচ্ছাই আপনার ভবিষ্যৎকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে ইনশাল্লাহ।
মো: নেয়ামুল ইসলাম
ডেপুটি রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার
এলিট পেইন্টস এন্ড ক্যেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।